ঢাকায় ভয়াবহ বায়ুদূষণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ঢাকায় বায়ুদূষণ চরম আকার ধারণ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। তথ্য মতে, রাজধানীর আশপাশের ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীর বাতাসে। ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা দিনের পর দিন ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু বর্তমান সময়ই নয়, গত দুই দশক ধরে বায়ুদূষণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীবাসী। বায়ুদূষণের কারণে এই সময়টায় শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, চুলকানিসহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হন মানুষ। জানা যায়, এ সময়টায় উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হয়। তখন বিষাক্ত বাতাস শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসে ঢুকে পড়ে। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যানসার, অ্যাজমা, অ্যালার্জি, চুলকানিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ বৃদ্ধি পায়। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন শিশু এবং বয়স্করা। প্রসঙ্গত, এর আগেও এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে যে, কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে তা উদ্বেগজনক। সঙ্গত কারণেই বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। উলেস্নখ্য, গত বৃহস্পতিবার বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় শহরের স্বীকৃতি পায় রাজধানী ঢাকা। এছাড়া সপ্তাহের শুরু থেকেই বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। মূলত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) এর তথ্যে দিনের বেশিরভাগ সময় ঢাকার দূষণের স্কোর ছিল ১৯০। যার অর্থ হচ্ছে এ শহরের বাতাসের মান 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' এবং এ অবস্থায় শহরের সবাই বিপজ্জনক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন। আমরা বলতে চাই, পরিস্থিতি এমন হলে তা কতটা আশঙ্কাজনক সেটি এড়ানো যাবে না। বরং করণীয় নির্ধারণসাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। উলেস্নখ্য যে, পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা দেখা যায়, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টির বেশি ইটভাটা। ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী। এছাড়া নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার মাধ্যমে ১৩ শতাংশ, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোর ফলে ৫ শতাংশ এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের দূষিত বায়ু পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার হয়ে দূষিত বায়ুর স্তর ঢাকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে ২৪ শতাংশ দূষণে ভুগছে ঢাকা। নাসার তথ্য অনুযায়ী গত ১৮ বছরে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে ৮৫ শতাংশ। ফলে ঢাকার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। লক্ষণীয়, বাংলাদেশ ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক বলছেন, রাজধানী ঢাকায় মেগা প্রকল্প চলমান থাকায় বায়ুদুষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ঢাকায় পুরনো গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার চারপাশের ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণ ছড়াচ্ছে। বলা দরকার, যেসব কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে তা আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই আমরা মনে করি। বায়ুদূষণ তৈরি করে ও দূষণ উৎপাদনকারী শিল্পকে আইনগতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। বায়ুদূষণ ঠেকাতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নীতি, আইনি কাঠামো নির্মোহভাবে বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হতে হবে এমন আলোচনাও সামনে আসছে, যা আমলে নেওয়া দরকার। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব আমলে নিতে হবে। একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর এর বড় প্রভাব রয়েছে। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের এটাও বিবেচনায় রাখা দরকার, বায়ুদূষণে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ফলে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।