সহনশীলতার চর্চা হোক

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী
সহনশীলতা মানুষের চরিত্রের অন্যতম একটি মহৎ গুণ। সহনশীলতা অর্থ সহ্য করার ক্ষমতা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের আবেগ ইচ্ছেকে দমন করা, শক্তি থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ পরায়ন না হওয়া। ধৈর্য্যশীল থাকা, রাগ নিবারণ করা সহনশীলতার পরিচয়। সমস্ত নবী রাসুল সহনশীল ও ক্ষমাশীল ছিলেন। মহান আলস্নাহ তাআলা ক্ষমাশীল ও ধৈর্য্যশীল হওয়ার জন্য তার বান্দাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন। সহনশীলতা একটি অনুপম আদর্শ। মানবজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা এবং উন্নতির জন্য সহশীল হওয়া প্রয়োজন। পবিত্র হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন মানুষ যখন জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ক্ষমা করে দেয় তখন আলস্নাহ পাক সেই মানুষটির মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। সুরা আনফালের ৪৬ নং আয়াতে আলস্নাহ তাআলা বলেন, তোমরা সহনশীলতা অবলম্বন করো কারণ আলস্নাহ সহনশীলদের সঙ্গে থাকেন। ইমাম গাজ্জালি (রা.) বলেন, ইমানের পর বিবেগের দাবি হলো মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা। প্রত্যেক সৎ ও অসৎ লোকের প্রতি অনুগ্রহ করা, সকলের সঙ্গে হাসি খুশি থাকা, বিনয়ী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবীদের প্রশ্ন করেন তোমরা কী জানো? জাহান্নাম কার জন্য হারাম। সাহাবীগণ বললেন আলস্নাহ ও রাসুল ভালো জানেন। তখন রাসুল বললেন যে ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী আচরণ করে, সহনশীলতার পরিচয় দেয় তার জন্য জাহান্নাম হারাম। সহনশীলতার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় কাজ সম্পাদনে আমাদের সহনশীল হতে হবে। হিংসা বিদ্ধেষ ভুলে গিয়ে দেশ জাতির উন্নয়ন ব্যক্তি ও পারিবারিক সকল স্তরে বিনয়ী থাকার চেষ্টা করতে হবে। বিনয়ী মানুষকে পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে পারিবারিক সামাজিক আচার আচরণে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, আন্তঃধর্মীয় সংস্কৃতি, লালন-পালনে সহনশীল ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বহুধর্ম গোত্র, অনুসারী ও অনুসরণের দেশ। এখানে ধর্মের পর্দা থাকলেও ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিরল দৃষ্টান্ত বহন করে। ধর্ম মানুষকে সহনশীল ভদ্রতা পরমত অহিংস হওয়ার শিক্ষা দেয়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, অন্যান্য উপাসনালয়ে নামাজ ইবাদত প্রার্থনা হবে। কেউ কারো উপাসনালয়ে হামলা আক্রমণ প্রতিরোধ করবে না। নিজ নিজ ধর্ম ইবাদত প্রার্থনা আনন্দচিত্তে পালন করবে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা এটাই। ধর্মীয় সংগঠন থাকবে। নিজ নিজ ধর্মের আচার অনুষ্ঠান প্রচার থাকবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। কাদা ছোড়াছোড়ি অন্যের মতের ধর্মের আদর্শে আঘাত করবেন না। যার যার ধর্ম বিশ্বাস চরিত্র নিয়ে বলার অধিকার সবার আছে। যার যার ধর্ম বিশ্বাস অনুসরণ তার অধিকার। সাংবিধানিকভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম বিশ্বাস নিয়ে পালন করবেন। কাউকে বাধা দেওয়া প্রতিরোধ করা, ধর্মান্তরিত করার কোনো সুযোগ কাউকেই দেওয়া হয়নি। মন্দির, গির্জা, মসজিদ ও মাজারে আক্রমণ হামলা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই প্রচলিত আইন ও সংবিধান সম্মত নয়। ব্যক্তি গোষ্ঠীর ধর্মীয় চিন্তা চেতনার প্রতিফলন বাস্তবায়ন অনুসরণ অনুকরণের সাংবিধানিক অধিকার সকল ধর্ম গোত্রের জনগণের জন্য সমানভাবে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার কতিপয় গোষ্ঠীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র দেখছি। এটি বাংলাদেশের অব্যাহত সম্প্রীতির জন্য মারাত্মকভাবে হুমকি। এই দেশে যোগ্যতা অভিজ্ঞতার মানদন্ডে সকল নাগরিক রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। সামাজিক রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে নিজস্ব ধর্মীয় দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলে আসছে। কেউ কাউকে কণ্ঠরোধ করছে না। দেশে হাজার হাজার মসজিদ আছে। মন্দির গির্জা উপাসনালয় আছে। এইসব উপাসনালয়ের সমর্থক অনুসারী সকলেই আপনাপন ধর্ম পালন করছে। কেউ কারো জন্য বাধা নয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই অধিকার সবার জন্য সমানভাবে দেওয়া আছে। তবুও কেন ধর্মীয় হানাহানি বিভাজন রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করে। কাদের ইঙ্গিতে কারা এইসব রাষ্ট্রবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে। রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। রাস্তা দখল করে সমাবেশের নামে উচ্ছৃঙ্খল কর্মসূচি পালন বাস্তবায়ন অনুমতি বন্ধ করতে হবে। জনগণের জীবন জীবিকার অধিকার নির্বিঘ্ন করতে হবে। কর্মজীবী মানুষের দৈনন্দিন রুটি-রুজির পথ বন্ধ করার মতো কোনো কর্মসূচিকে অনুমতি দেওয়া যাবে না। অপরাধীদের আইনের মাধ্যমে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবনে একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালনের নামে একটি গোষ্ঠী সেখানে নারকীয় তান্ডব চালাতে দেখেছি। তাদের হামলায় একজন আইনজীবীর নির্মমভাবে মৃতু্য হয়েছে। সেখানের পবিত্র মসজিদে ভাঙচুর চালিয়েছে। শত শত আইনজীবীর ওপর হামলা করেছে। আদালত ভবনের বাইরে লালদীঘি আন্দরকিলস্না কতোয়ালি নিউমার্কেট পর্যন্ত এই তান্ডবলীলা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের ভয়ভীতি আতঙ্ক তৈরি হয়। বিপুল সংখ্যক পরিবহণ প্রাইভেট গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে দুষ্কৃতকারীরা। ২৭ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে উত্তেজনা ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার অসংখ্য কারণ তৈরি হয়েছে। ধর্মের নামে সন্ত্রাস লালন পালন কর্মসূচির নামে জনভোগান্তি মোটেও প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাস্তাঘাট দখল করে অধিকার আদায়ের নামে জনভোগান্তির কর্মসূচির অনুমতি ও পালন করা বন্ধ করতে হবে। ষড়যন্ত্রমূলক কর্মসূচির নামে দেশ ও জনগণকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যায় আবদার অসাংবিধানিক কর্মসূচি পালনের নামে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। গত কয়েক দিনের সব ধরনের হত্যাযজ্ঞ বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী ব্যক্তি গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় এনে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। আইনজীবী হত্যায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বিচারের আওতায় দেখতে চায় দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ। মাহমুদুল হক আনসারী ঢাকা