বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও
সঠিক পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
হঠাৎই খোলাবাজারে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো কারসাজি করে এমনটি করেছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তি দামেও সয়াবিন তেল পাননি অনেক ক্রেতা। পবিত্র রোজা সামনে রেখে এখন থেকেই সংকট তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই পুরনো চেনাজানা সিন্ডিকেট বাজার থেকে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে কারসাজি শুরু করেছে। মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডিলারের কাছে সরবরাহ কমিয়েছে। এতে ডিলার থেকে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমেছে। তাই বাড়তি দামেও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। এতে বাজার থেকে এক প্রকার উধাওই হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। তেল না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন ভোক্তারা।
সয়াবিন তেলের এই সংকটে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। বাজার করতে আসা অনেক ক্রেতা তেল কিনতে এসে খালি হাতেই ফিরছেন। কেউ কেউ সয়াবিন তেল না পেয়ে কিনে নিচ্ছেন রাইস ব্র্যান তেল। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। সংকট দেখিয়ে ভোক্তার কাছে অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে খোলা বা লুজ তেল বিক্রি করছেন অনেক দোকানি। সংকট দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দু-একটি দোকানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিললেও বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকায়। এছাড়া, দু-এক জায়গায় এই একই তেল ১৭৫-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে একজন ডিলারের চাহিদা ১০০ কার্টন, সেখানে কোম্পানি ১০-২০ কার্টন তেল দিচ্ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
তবে একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশে ডলার সংকট এখনো চলমান রয়েছে। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলে বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, ভোজ্যতেল নিয়ে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে বাজারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। তারা বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে, বাজারে ভোজ্যতেলের তীব্র সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েও সুফল মিলছে না। মনে রাখতে হবে, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি আর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা এক কথা নয়।
বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, আমরাও সম্পাদকীয় কলামে বহুবার লিখেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।