জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

জননিরাপত্তা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সমাজের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ভিত্তি।

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফারজানা ইসলাম
জননিরাপত্তা একটি রাষ্ট্রের মৌলিক স্তম্ভ। এটি নিশ্চিত করতে না পারলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার সুযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। বাধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক চলাচল ও জীবনযাপনের সুযোগও। অন্তর্র্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারাদেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বাড়ছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা। নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পথে-ঘাটে, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও মানুষ নিরাপত্তাহীন। সারাদেশেই অপরাধ কর্মকান্ড বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। চুরি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন কিছুটা কমলেও খুন, ডাকাতি ও অপহরণ বেড়েছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে খুনের ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এ সময়ে সারাদেশে ৫২২টি খুনের মামলা করা হয়েছে- যা ২০২৩ সালের এই দুই মাসের তুলনায় ৩৪টি বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সারাদেশে মামলা করা হয়েছে ২৫ হাজার ৪৫৬টি। এর মধ্যে খুনের মামলা করা হয়েছিল ৪৮৮টি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খুন ছাড়াও ছিনতাই, ডাকাতি, দসু্যতা, শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরির ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে অনেক। এটি ঠিক যে সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। তারা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না, যে কারণে সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না নৃশংসতা, অমানবিকতা? পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অনেকে মনে করছেন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশের কাজের গতিহীনতা। ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের সময় সারাদেশে অনেক থানায় হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি অনেক অপরাধীও বের হয়ে যায়। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর একটি দীর্ঘ সময় পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। ফলে, দেশব্যাপী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম হলো- তার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জননিরাপত্তা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সমাজের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ভিত্তি। বর্তমান সময় আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এ ক্ষেত্রে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটি আমরা কেউ চাই না। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাগরিক সচেতনতার গুরুত্বও কম নয়। প্রতিটি নাগরিককে আইন মেনে চলতে এবং অপরাধ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ এ দেশ আমাদের সবার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা। এটি কেবল সমাজকে অপরাধমুক্ত করবে না, বরং একটি উন্নত, সভ্য এবং শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে একটি অপরাধমুক্ত, উন্নত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ফারজানা ইসলাম : কবি ও সামাজিক উদ্যোক্তা