পাঠক মত
সিলেটের বন্যা বনাম হাওড়ের অলওয়েদার সড়ক
প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু চেয়ারম্যান অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদ
ভার্চুয়াল আকাশে ঘোরাফেরা করা হাজারও তথ্যের মধ্যে কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্য, সত্য ও বাস্তবতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়। এই মিডিয়া ট্রায়ালের ক্ষতি যখন একটি অঞ্চল অথবা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ভুক্তভোগী হয়। তখন বাস্তবতা উন্মোচিত করার প্রয়োজন হয়ে ওঠে। তেমনই কয়েক মাস আগে ঘটে যাওয়া সিলেটের বন্যাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের হাওড় অধু্যষিত অষ্টগ্রাম ইটনা মিটামইনের অলওয়েদার সড়ক নিয়ে প্রায় সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল্পিত তথ্য নিয়ে সরব হন কতিপয় নেটিজেনরা।
এসব বিকৃত তথ্য সমাহারের স্রোতে কখনো কখনো যোগদেন রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীলরাও। শুরু হয় মিডিয়া ও ভার্চুয়াল জীবনে বির্তক, উদ্বিগ্ন হন হাওড়াঞ্চলবাসীসহ স্থানীয়রা। কিন্তু, এই গুজব নিরসনে বাস্তবতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো সমীক্ষা না করার ফলে মিথ্যা তথ্যগুলো দিনে দিনে বেড়েই চলছে। এই তথ্য বিকৃতি থামাতে সরকারি উদ্যোগে বা বিশেষজ্ঞ মতামত ও সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রকৃত সমস্যা নিরুপণ এখন সময়ের দাবি।
সিলেটে বন্যার অন্যতম কারণ সিলেটের অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদীর নাব্যতা হ্রাস, অপমরা ছড়া/খাল/বিল। অন্যদিকে নেত্রকোনা এবং সুনামগঞ্জ জেলার বিশাল হাওড়ে অপরিকল্পিত কয়েক হাজার কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাল-নদী ভরাট। সুনামগঞ্জে ৫৩টি হাওড়ে ১ হাজার ৮১৭ কিলোমিটার, নেত্রকোনা ৯টি হাওড়ে ৩৮০ কিলোমিটার ও সিলেটে বিভিন্ন হাওড়ে ২১০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ রয়েছে। এসব ফসল রক্ষা বাঁধাগুলো কি বর্ষার পানি আটকায় না? ছড়া, নদী, খাল, বিল ভাড়াট হয়ে যাওয়া কি দায়ী নয়? নাকি প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশে কাল্পনিক অভিযোগে হাওড়ের সড়ককে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। পানির ধর্ম নিচে প্রবাহিত হওয়া ও অবস্থান করা, নিম্নাঞ্চল ডুবা বা পস্নাবিত হওয়া চিরায়িত নিয়ম। কিন্তু ২০২৪ সালে সিলেটে ৩-৪ বার বন্যা হলেও অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনে বন্যা তো দূরের কথা সাধারণ বর্ষার পানিও তখন আসেনি। সিলেট বন্যা হলে পুরো হাওড়াঞ্চল পানির নিচে নিমজ্জিত হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত। সমুদ্রপিষ্ঠের উচ্চতা বা ভৌগোলিক কারণে সিলেট উঁচু এবং হাওড়াঞ্চল নিচুতে অবস্থান। সংঙ্গত কারণেই এই সড়ক হাওড়ের স্রোতধারা বাধাগ্রস্ত করলে বেশি পস্নাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতো সড়কসংলগ্ন হাওড়াঞ্চল, যা আদৌ হচ্ছে না। তারপরও বিকৃত তথ্যের জবাবে 'উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাঢ়ে' হাওড়ের অলওয়েদার সড়ককে ঘিরে নানা রকম উসকানিমূলক বক্তব্য শোনা যাচ্ছে সম্প্রতি সময়।
সড়কের পূর্বাংশে আমাদের হাওড়ের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা অসংখ্য নদী, নালা, খাল, বিল কয়েক বছর ধরে পলিমাটি ফসলিজমিগুলোয় দিনদিন জমির উচ্চতা বাড়ছে, নাব্যতা হারিয়ে সেচ সংকটে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হাওড়পাড়ের সাধারণ কৃষকরা।
কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে নয় বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষা চালিয়ে সড়কের ক্ষতি না করে, আরও বেশি পরিবেশ উপযোগী পানি প্রবাহ স্বাভাবিক ব্যবস্থা করা হবে এটাই হাওড়বাসীর প্রত্যাশা।
সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু
চেয়ারম্যান
অষ্টগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদ