বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কোনো রোগ বৃদ্ধি পেলে কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, শীতের শুরুতেই রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, বয়স্ক ও শিশুদের আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে তা মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। আমলে নেওয়া দরকার, চিকিৎসকরা বলছেন- রোগীর বড় একটি অংশই শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। ঠান্ডা আবহাওয়ার পাশাপাশি বায়ুমন্ডলের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি এজন্য দায়ী। এ ছাড়া লক্ষণীয় যে, জানা যাচ্ছে, রোগীদের আরেকটি অংশ আসছে জ্বর নিয়ে। যাদের বেশিরভাগই শীতকালীন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে আছে এডিনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ আধুনা কোভিড-১৯। কিন্তু এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, একই সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকায় রোগীরা চিকিৎসা নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। ফলে, হাসপাতালে আসছেন দেরি করে। এতে রোগীর ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা বলতে চাই, একদিকে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি; অন্যদিকে, রোগীর ঝুঁকি বাড়ছে- ফলে সার্বিক বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। এ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। তথ্য মতে, মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, রাজধানীর ফার্মেসিগুলোতে শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নেবুলাইজারের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন নেবুলাইজারে জন্য বহুলব্যবহৃত সাল্টারিন বা সলুয়েশন নেই অধিকাংশ ফার্মেসিতে এমনটি খবরে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে এটা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি যে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ সময় পরিবেশে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতাও কমে যাচ্ছে এবং ধুলাবালি বাড়ছে। ফলে, বিভিন্ন অ্যালার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অন্যদিকে, শীতে কিছু কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। সব মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে, সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, অ্যাজমা, চর্মরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। যাদের অনেকেই জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। এছাড়া, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) একই পরিস্থিতি। গত এক সপ্তাহে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা ৮০ শতাংশই এ জাতীয় রোগে আক্রান্ত বলে জানা গেছে। রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঠান্ডা বাড়ায় বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশেষ গত কয়েকদিনে প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং এ সময়ে জনসাধারণ কীভাবে সচেতন বা সতর্ক থাকবে সেটির প্রচার প্রচারণা জরুরি। অন্যদিকে, রোগী বাড়লেও চিকিৎসা যেন ব্যাহত না হয় সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন সাবেক পরিচালক বলছেন, শীতে সর্দি, কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ছে। চর্মরোগ ও ডায়রিয়াও বাড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। গরমের কাপড় পরিধান করাতে হবে। বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। নাক দিয়ে পানি এলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিহিস্টামিন ও এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া, একজন চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, শীতের সময় ধুলাবালি ও বাতাসের শুষ্কতা কমে যায়। এ কারণে শিশুদের চর্মরোগের পাশাপাশি চুলকানি বেশি হয়। বাচ্চাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। আমরা বলতে চাই, চিকিৎসরা সেসব পরামর্শ দিচ্ছেন সেটি যেমন মেনে চলতে হবে, তেমনি সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, শীতের শুরুতেই রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ- এটা এড়ানোর সুযোগ নেই। বিশেষ করে, বয়স্ক ও শিশুদের আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এটি অত্যন্ত উদ্বেগের। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।