পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে

পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি সে ভাবনার সময় এসেছে। পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারেরও করণীয় রয়েছে। দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ফারজানা ইসলাম
আমাদের চারপাশের পরিবেশ নানা কারণে প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য আমরা পরিবেশকে নানাভাবে ব্যবহার করি। ফলে, পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয় তখনই পরিবেশ দূষণের বিষয়টি আমাদের স্মরণে আসে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশ দূষণের আরও একটি বড় কারণ। পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্পকারখানা সচল রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস। পরিবেশ দূষণের তিনটি ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। দূষণের কারণে মানুষ কলেরা, ডায়রিয়া, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কলকারখানার বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস, ধূলিকণা, ধোঁয়া অথবা দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত করে। গাছপালা ও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় বায়ু দূষিত হচ্ছে। যেখানে সেখানে ফেলে রাখা ময়লা ও ত্যাগকৃত মলমূত্রের দুর্গন্ধ হতে বায়ু দূষিত হয়। অন্যদিকে, দূষিত পানি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। কলকারখানার বর্জ্য পানিতে ফেলা। পুকুর বা নদীর পানিতে গরু মহিষের গোসল করানো ও কাপড়-চোপড় ধোয়া। পানি দূষণের ফলে জলজপ্রাণি মারা যাচ্ছে ও জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটছে। মানুষ কলেরা, ডায়রিয়া ও আমাশয়ের মতো নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও মানুষ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর তালিকায় আজ শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এ সময় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ২৪১ স্কোর নিয়ে বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এ সময় ২১৯ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটিতে বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। তালিকায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনামের হ্যানয় (১৯৪), ভারতের দিলিস্ন (১৯১) ও কলকাতা (১৭৮)। এদিন ঢাকায় সবচেয়ে দূষিত বাতাস বিরাজ করছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি এলাকায়। ৩৪৮ একিউআই স্কোর নিয়ে সেখানে বাতাসের মান ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তালিকায় এরপরেই রয়েছে যথাক্রমে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং (২৬৫), মিরপুরের কল্যাণপুর (২৫৯), আগাখান একাডেমি (২৫৭), গুলশান-২ রব ভবন এলাকা (২৪৪), সাভারের হেমায়েতপুর (২৪২), ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এলাকা (২৪১), মহাখালীর আইসিডিডিআরবি এলাকা (২৩৫), তেজগাঁওয়ের শান্তা টাওয়ার এলাকা (২৩২), গুলশান লেক পার্ক (২২৯) এলাকায় বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। আইকিউএয়ারের মানদন্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। মনে রাখতে হবে, বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ ফুসফুসের ক্যানসার, শ্বাসজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মাটিতে মেশার ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক, গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য, কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হচ্ছে। মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। গাছপালা ও পশুপাখি মারা যাচ্ছে এবং তাদের বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে- শব্দদূষণ মানুষ জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে এবং লাউড স্পিকার বা মাইক বাজিয়ে মানুষ শব্দদূষণ করছে। কলকারখানায় বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহারও শব্দদূষণের কারণ। শব্দদূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। অবসন্নতা, শ্রবণ শক্তি হ্রাস, ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি, কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা শব্দদূষণের ফলে হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা কীভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি সে ভাবনার সময় এসেছে। পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারেরও করণীয় রয়েছে। দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ফারজানা ইসলাম : কবি ও সামাজিক উদ্যোক্তা