কমেছে কোটিপতি গ্রাহক সঠিক পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। গত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশ। এর সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে ব্যাংকে টাকা জমানোর পরিমাণ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকা রয়েছে, এমন অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যাও কমেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ঠ। সাধারণ মানুষ এখন সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে, ব্যাংকে টাকা জমানোর চেয়ে অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। অন্যদিকে, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার আসার পর সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও নেতাসহ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের হিসাব নেওয়া শুরু হয়েছে। অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হয়েছে। ফলে, বড় অঙ্কের আমানতকারীরা ভয়ে টাকা সরিয়ে ফেলছেন। এসব কারণে বিত্তশালী ও বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫টি। এসব হিসাবে জমা আছে ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৩টি এবং এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও টাকার অংকে আমানতের পরিমাণ কমেছে। একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে (সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে) এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে, এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। এসব হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪১ শতাংশই জমা রয়েছে এই ১ লাখ ১৭ হাজার অ্যাকাউন্টে। এর আগে গত জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি অ্যাকাউন্টে। ওইসব হিসাবে জমা ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার উপরে থাকা অ্যাকাউন্ট ও তাদের জমানো টাকা দুটোই কমেছে। তবে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে, এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে। আমরা মনে করি, দেশে ধনিক শ্রেণির উত্থান যেমন সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি করে, একইভাবে ব্যাংকে কোটিপতির সংখ্যা কমে গেলে ব্যাংকের আমানতে ঘাটতি পড়বে- যা এখন দৃশ্যমান। সুতরাং, দেশে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।