স্মরণীয়-বরণীয়

লুই পাস্তুর

প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
লুই পাস্তুর একজন ফরাসি অণুজীববিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন অণুজীব অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়ের পচনের জন্য দায়ী। জীবাণুতত্ত্ব ও বিভিন্ন রোগ নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। লুই পাস্তুর জন্মগ্রহণ করেন ১৮২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের জুরা প্রদেশের দোল শহরে। আর বেড়ে ওঠেন আরবোয়া শহরে। দরিদ্র পিতা সেখানকার একটি ট্যানারিতে চাকরি করতেন। ১৮৪৭ সালে পাস্তুর ফ্রান্সের একোল থেকে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি জৈব যৌগের আলোক সমানুতা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি দেখান যে, আলো যখন জৈব যৌগের দ্রবণের ভেতর দিয়ে যায় তখন এর দিক পরিবর্তন ঘটে। তিনি প্রস্তাব করেন, একই জৈব যৌগ যাদের গঠন এক, তারা সমানু হতে পারে যদি তারা একে-অপরের আলো প্রতিবিম্ব হয়। ১৮৪৮ সালে দিজোঁ লিসিতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে চাকরি করেন। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টরের কন্যা মারি লরেন্তের সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হন। ১৮৫৪ সালে পাস্তুর স্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের ডিন হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তখন থেকেই তিনি স্থানীয় মদের কলগুলোতে গাঁজন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি দেখান অ্যালকোহল উৎপাদন ইস্টের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। তিনি আরও প্রমাণ করেন মদের অম্স্নতা তাতে ব্যাক্টেরিয়ার ক্রিয়ার জন্য ঘটে। পাস্তুর মদের স্বাদ ঠিক রেখে ব্যাক্টেরিয়া মুক্ত করার জন্য গবেষণা শুরু করেন। তিনি দেখেন মদকে গরম করলে ব্যাক্টেরিয়া মরে যায় এবং মদের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। তৎকালীন সময়ে অনেকে ধারণা করতেন ব্যাক্টেরিয়া নির্জীব বস্তু থেকে আপনা আপনি সৃষ্টি হয়। এর বিপক্ষেও অনেকে বিজ্ঞানী ছিলেন। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের সময় থেকেই এই বিতর্ক ছিল, কিন্তু কোনো বিজ্ঞানসম্মত উত্তর ছিল না। পাস্তুর পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান, নির্জীব বস্তু থেকে ব্যাক্টেরিয়া বা কোনোরকম জীবনের সূত্রপাত হতে পারে না ১৮৬৫ সালে ফ্রান্স সরকার পাস্তুরকে ফ্রান্স রেশম শিল্পের সমস্যা সমাধানে আহ্বান জানায়। এক মহামারিতে রেশম পোকার উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। পাস্তুর দেখেন রেশম পোকার এই সমস্যা বংশগত এবং মায়ের থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সংক্রামিত হতে পারে। তিনি প্রস্তাব করেন কেবল রোগমুক্ত গুটি বাছাই করার মাধ্যমেই রেশম শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। পাস্তুর দেখান কিছু রোগ অণুজীব দ্বারা সংঘটিত হতে পারে, যারা জল ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তিনি তার জীবাণু তত্ত্বে দেখান যে, অণুজীব বৃহদাকার জীবকে আক্রমণ করে রোগ সংঘটিত করতে পারে। তিনি প্রথম অ্যানথ্রাক্সের টিকা আবিষ্কার করেন। অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধক আবিষ্কারের পর পাস্তুর অন্যান্য রোগের প্রতিরোধের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তিনি জলাতঙ্ক নিয়ে কাজ করে দেখেন এটি নার্ভাস সিস্টেমের একটি রোগ এবং আক্রান্ত পশুর স্পাইনাল কর্ডের নির্যাস দ্বারা অন্য প্রাণীকে জলাতঙ্কে আক্রান্ত করা যায়। জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কারের পরে ফ্রান্স সরকার পাস্তুর ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকাকালীন ১৮৯৫ সালে লুই পাস্তুর মৃতু্যবরণ করেন।