স্যার ফ্রান্সিস বেকন (২২ জানুয়ারি, ১৫৬১- ৯ এপ্রিল, ১৬২৬) একাধারে একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও তিনি বৈজ্ঞানিক বিপস্নবের প্রবক্তা এবং জ্ঞানান্ধতা ও গোঁড়ামিবিরোধী হিসেবে সুখ্যাত হন। ফ্রান্সিস বেকনকে অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলা হয়। তিনি দর্শনিক চিন্তাধারার কিছু মৌলিক তত্ত্ব প্রবর্তন করেন যেগুলোকে বেকনিয়ান মেথডও বলা হয়ে থাকে। কোনো জিনিসের উৎস অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াগুলো তিনিই প্রবর্তন করেন। ফ্রান্সিস বেকন ১৬০৩ সালে নাইটহুড পান। এছাড়াও ১৬১৮ এবং ১৬২১ সালে ব্যারন ভিরলাম এবং ভিসকাউন্ট সেন্ট এলবান উপাধি পান। যেহেতু মৃতু্যর সময় তার কোনো উত্তরসূরি ছিল না, তাই পরবর্তী সময়ে তার উপাধিগুলো বিলীন হয়ে যায়। ফ্রান্সিস বেকন ২২ জানুয়ারি, ১৫৬১ সালে লন্ডনের স্ট্রান্ডের কাছে অবস্থিত ইয়র্ক হাউজে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনীকাররা মনে করেন, বেকন ঘরে থেকেই পড়াশোনা করেন। কারণ তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন এবং ধারণা ছিল সারা জীবন ধরে তাকে এই নিয়ে ভুগতে হতে পারে। তিনি অক্সফোর্ড থেকে গ্র্যাজুয়েটেড জন ওয়ালসালের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে ৫ এপ্রিল, ১৫৭৩ সালে যখন তার বয়স বারো বছর, তিনি ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে প্রবেশ করেন। বেকনের শিক্ষা লাতিন ভাষায় মধ্যযুগীয় পন্থায় ছিল। তিনি পটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়তেও পড়াশোনা করেন। ক্যাম্ব্রিজে থাকাকালীন সময়ে রাণী প্রথম এলিজাবেথের সঙ্গে তার দেখা হয়। রাণী এলিজাবেথ তার অকালপক্ক পান্ডিত্যে মুগ্ধ হন এবং তাকে 'দ্য ইয়ং লর্ড কিপার' নামে সম্বোধিত করেন। বেকনের নিজের কথা অনুযায়ী তার তিনটি লক্ষ্য ছিল : সত্য উদ্ঘাটন করা, নিজ দেশের সেবা করা এবং তার ধর্মের সেবা করা। তিনি একটি মর্যাদাপূর্ণ পদ পাওয়ার মাধ্যমে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। তার সাংসদ জীবন শুরু হয় যখন তিনি ১৫৮১ সালে বসিনি, কর্নওয়াল থেকে একটি উপনির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৫৮৪ সালে তিনি ডরসেটের মেলকম্ব থেকে এবং ১৫৮৬ সালে টন্টন থেকে সংসদে আসন গ্রহণ করেন। বেকন আইন সংশোধন ও সরলীকরণে আগ্রহী এমন উদারপন্থি সংস্কারক হিসেবে পরিচিত হন। রাণীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তিনি সামন্ততান্ত্রিক সুবিধা এবং স্বৈরশক্তির বিরোধিতা করেন। ৯ এপ্রিল, ১৬২৬-এ, ফ্রান্সিস বেকন নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের বাইরে হাইগেটে অবস্থিত আর্নডেল হাউজে মারা যান।