পাঠক মত
শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার
প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি শিক্ষা পদ্ধতিকে আরও কার্যকর, সহজলভ্য এবং আকর্ষণীয় করে তুলছে। শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার বলতে শিক্ষা কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রযুক্তি, সরঞ্জাম ও ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষাদানের পদ্ধতিকে আধুনিক, কার্যকর এবং আকর্ষণীয় করে তোলাকে বোঝায়। এটি শুধু শিক্ষকদের জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও শেখার একটি সুবিধাজনক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়াকে তাদের প্রয়োজন ও গতির সঙ্গে মানানসই করার সুযোগ দেয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল ধারণাগুলো সহজে শেখানো সম্ভব। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষার উপকরণে সহজে প্রবেশ করা সম্ভব। অনলাইন কোর্স এবং ই-লার্নিং পস্ন্যাটফর্মগুলো এমনকি প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্যও শিক্ষা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লাস রুমে উপস্থিত না থেকেও বিভিন্ন ভিডিও কনফারেন্সিং টুল যেমন তড়ড়স, এড়ড়মষব গববঃ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা বাসায় বসে থেকেই ক্লাস করতে পারি- যা করোনা মহামারির সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া এবং দ্রম্নত ফলাফল বিশ্লেষণ করা যায়। এতে সময় বাঁচে এবং প্রক্রিয়াটি আরও নির্ভুল হয়। ফলে, আমরা অতিরিক্ত সময়টুকু অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করতে পারব। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহার শিখে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারে। কোডিং, গ্রাফিক ডিজাইন ও সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ঠজ) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (অজ) ব্যবহার করে জটিল বিষয় আরও সহজভাবে শেখানো সম্ভব। গেমিফিকেশন পদ্ধতি শেখার মধ্যে আনন্দ ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে। এভাবে শিক্ষায় প্রযুক্তির সঠিক ও সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব- যা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে অনেক উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে।
মো. সাদি ইসলাম আলিফ
আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিশু অপহরণ বন্ধ হোক
বর্তমানে শিশু অপহরণ যেন একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতাল, স্কুল, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ থেকে শিশু অপহরণের হৃদয়বিদারী ঘটনা খবরের পাতায় ওঠে আসে। সাধারণত পারিবারিক শত্রম্নতা, জিম্মি করে শিশুর পরিবার থেকে টাকা আদায়, পাচার ও যৌন নির্যাতনের উদ্দ্যেশ্যে বিক্রি করার জন্য শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটে। সমাজের এক শ্রেণির নির্মম মানুষ এ ধরণের গর্হিত কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। তাদের ভোগ বিলাসের শিকারে বলি হচ্ছে পবিত্র, নিষ্পাপ শিশুদের জীবন। আর পরিবারগুলোতে নেমে আসছে বিষণ্ন শোকের ছায়া। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে শিশু অপহরণের ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর এর তথ্যমতে, '২০২৪ সালে মোট ৪ হাজার ১৩৭ টি শিশু হারিয়ে যাওয়া বিষয়ক কল আসে।' যেখানে ২০২৩ সালে এর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭০ টি। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে শিশু অপহরণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ এর আওতায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯১ জন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর বাকিদের খবর এখনও জানা যায় নি।' আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের ভিত মজবুত করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদেরকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। কিন্তু শিশু অপহরণের পূর্বে এ ধরণের গর্হিত কর্মকান্ড রোধে তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পদক্ষেপ নেওয়া হয় শিশু অপহরণ বা লাশ উদ্ধার হওয়ার পর। অপহরণের ঘটনা এভাবে বাড়তে থাকলে সমাজে একসময় শিশুদের নিরাপত্তা থাকবে না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে পড়াশোনা করাতেও ভয় পাবে। আস্তে আস্তে ভবিষ্যৎ সমাজে শিক্ষার আলো নিভে যাবে। দেশ থেকে যাবে উন্নত বিশ্বের পদতলে। আর সমাজে অন্যায়, অনৈতিকতার বিজয় হবে। কাজেই যত দ্রম্নত সম্ভব শিশু অপহরণ বন্ধ করে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশু অপহরণ রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত। পূর্বগঠিত সকল শিশু অপহরণকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। স্কুল ও খেলার মাঠে শিশুদের নিরাপত্তা জোরদার করে এবং শিশুদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ চালিয়ে যাওয়া উচিত। বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা, কর্মশালা, সেমিনারের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে জায়গায় জায়গায় সিসিটিভি, জিপিএস ট্র্যাকিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করা উচিত। এছাড়াও শিশু অপহরণ রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয় করা উচিত। বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত। আমাদের নেওয়া কার্যক্রমেই পারে দেশকে একটি সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে।
মাইফুল জামান ঝুমু
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়