পাঠক মত
পরিবেশের বন্ধু বৃক্ষ হোক বাঁচার পথ
প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শুভ সরকার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। তবে, বর্তমানে দেশে এই হার মাত্র ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এটি শুধুমাত্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়, দেশের ভূপ্রকৃতির উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন সড়ক। এসব সড়ক তৈরির সময় রাস্তার দুপাশে থাকা গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে না। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বসতি স্থাপন, কৃষি সম্প্রসারণ, আসবাবপত্র তৈরির জন্য গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনভূমি ধ্বংসের হার বাড়ছে। বসতবাড়ি ও শিল্পকারখানা তৈরির জন্য বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। গৃহস্থালির জ্বালানি হিসেবে গাছের ব্যবহার এবং ইটভাটার জন্য কাঠ আহরণ পরিবেশ ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশুপালনের জন্য বনভূমি ধ্বংস করে খামার নির্মাণ করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং বড় বড় ভবন নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বনভূমির জমি। অনেক সময় সড়কের দুপাশে গাছ কাটার পর সেখানে নতুন গাছ লাগানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বনভূমি ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নও বাড়ছে। অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলার কারণে মাটি ক্ষয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ভূমিধস এবং বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, খরা পরিস্থিতি আরো তীব্র হচ্ছে। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রাণী বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। বনাঞ্চলের অধিবাসীরাও তাদের জীবনযাত্রার পরিবেশ হারাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশকেই প্রভাবিত করছে না, বরং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঔষধি গাছপালার অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে পর্যটন শিল্প বিপর্যস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাওয়ায় পর্যটক আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। গাছ লাগানোর জন্য ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। রাস্তার পাশে, বসতবাড়ি, এবং ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। বনভূমি সংরক্ষণের জন্য সরকারি নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি বনাঞ্চলের অবৈধ দখল এবং গাছ কাটার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি জোরদার করা প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে বনভূমি রক্ষা এবং পুনরায় বনায়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশ রক্ষা নিশ্চিত করতে হলে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন।
প্রিয়ন্তী কর্মকার
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ
বেকারত্ব বাড়ছে
বাংলাদেশে প্রতিবছর বেকারত্বের হার দ্রম্নত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। অথচ এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন আরো দ্রম্নততর হতো। যেখানে শিক্ষিত হয়েও বেকার থাকতে হয়, সেখানে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বেকারত্ব সমস্যা নিরসনে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিচে এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হলো: ১. কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। ২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। ৪. ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। ৫. উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার মানদন্ড এবং কারিকুলাম আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৬. নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ৭. শিক্ষাখাতে পরিকল্পিত বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। ৮. দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ৯. শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। ১০. সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে হয়তো শিক্ষিত সমাজকে আর বেকারত্বের অভিশাপে পড়তে হবে না।
শুভ সরকার
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়