নদনদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কৃষি ক্ষেত্রে যে কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা উদ্বেগজনক। খবরে প্রকাশ, বরিশাল বিভাগের নদনদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ দ্রম্নতগতিতে বাড়ছে। আর মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিভাগের অন্তত ২০টি নদীর পানি প্রায় শতভাগ লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। যা ১০ বছর আগেও ছিল ৪টি। জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে লবণাক্ত পানির প্রভাবে এরই মধ্যে বিভাগে ৫২ ভাগ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রম্নত হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন। আসছে দিনগুলোয় উৎপাদন আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে, যত দ্রম্নত সম্ভব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রম্নত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। ৫২ ভাগ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রম্নত ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এই বিষয়গুলো সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এছাড়া, উৎপাদন আরও কমার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটাও এড়ানো যাবে না। উলেস্নখ্য, বরিশাল মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, সেচের জন্য নদীর পানিতে ০ দশমিক ৭ ডিএস পার মিটার এবং মাটিতে ২ ডিএসের নিচে পার মিটার লবণাক্ততা থাকতে হয়। কিন্তু্তু সম্প্রতি চালানো গবেষণায় দক্ষিণাঞ্চলের নদীর পানিতে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ ডিএস পার মিটার ও মাটিতে সর্বোচ্চ ২৫ ডিএস পার মিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। লক্ষণীয়, আগে সাগরসংলগ্ন নদীতে শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা পাওয়া যেত। এ নদীগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ হলো- আন্ধারমানিক, আগুনমুখা ও বিষখালী। কিন্তু বর্তমানে এই তিনটিসহ বিভাগের অভ্যন্তরীণ যেমন বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তনখোলা, কারখানা, ভোলা সংলগ্ন মেঘনা, পিরোজপুরের বলেশ্বরের মতো মোট ২০টি নদীর পানি শুকনো মৌসুমে লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। যে কোনো কারণেই হোক ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার অর্থ হলো আশঙ্কাজনক বাস্তবতা তৈরি হওয়া। ফলে, লবণাক্ত পানির প্রভাবে ফসলিজমি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জানা যায়, জোয়ারে লবণ পানি ঢুকে নদীর পানি লবণাক্ত হয়ে যায়। অথচ নদীর পানিতে লবণ বাড়লে এর প্রভাব মাটিতেও পড়ে। মাটির লবণাক্ততা ৮ ডিএস পার মিটার অতিক্রম করলে তা ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তাই সার্বিক বিষয় এড়ানোর সুযোগ নেই। তথ্য মতে, বরিশাল বিভাগে চাষযোগ্য ৮ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর বা ৫২ শতাংশ লবণাক্ততায় আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সাগরপাড়ের জেলা পটুয়াখালী। সেখানে ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৮০ হেক্টর বা ৩৯ শতাংশ জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এছাড়া সাগরপাড়ের আরেক জেলা বরগুনায় ২৪ শতাংশ, ভোলায় ২৪ শতাংশ জমি লবণাক্ততার বিষের কবলে পড়েছে। লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমি সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায় মাত্র ১ শতাংশ। বরিশালে ৩ ভাগ ও পিরোজপুরে ৯ ভাগ জমি লবণাক্ততার কবলে পড়েছে। সর্বোপরি, লবণাক্ত পানির প্রভাব আমলে নিতে হবে। যেভাবে কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতি হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে; তা বিবেচনায় রেখে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 'গত কয়েক বছর মাটি ও পানি বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে, শুকনো মৌসুম তথা নভেম্বর মাস থেকে এখানে নদীগুলোয় লবণাক্ততা বাড়তে থাকে। ফলে, এখানে পানি ও মাটির গুণাগুণ হ্রাস পাচ্ছে। এমন অব্যাহত থাকলে এসব এলাকায় লবণ সহনশীল ফসল চাষ করার বিষয়টিও ভাবতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সময়ক্ষেপণ না করে দ্রম্নত উত্তরণের পথ ঠিক করতে হবে।