ধর্ষণ আর কত?

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের দেশের বহু সামাজিক ব্যাধির অন্যতম হলো ধর্ষণ। এই সমস্যা আগেও ছিল, এখনো আছে আর নিকট ভবিষ্যতে যে একে পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে তা মনে হয় কেউই বলবে না। কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার এটাই কারণ যে, বর্তমানে ধর্ষণের হার বেড়েছে বহুগুণে। মেয়েরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। বাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক পরিবহন সবখানেই ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। আপন থেকে পর কেউই যেন বাদ যাচ্ছে না। তিন বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা মহিলা কেউই ধর্ষকদের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে কন্যা শিশু জন্ম নিলেই বাবা-মাকে ভাবতে হচ্ছে যে তারা তার কন্যা শিশুটিকে বেঁচে থাকার জন্য একটি সুস্থ, সুন্দর এবং নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারবে কিনা। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে আমাদের মেয়েরাও এগিয়ে আসছে ছেলেদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সবাই এ কথা স্বীকার করে নেবে যে সমাজ ও দেশ বিনির্মাণে ছেলেদের যেমন ভূমিকা আছে ঠিক তেমনি মেয়েদেরও ভূমিকা আছে। কিন্তু মেয়েরা যদি যেখানে-সেখানে যখন-তখন এমন ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার হতে থাকে তাহলে বাকি মেয়েদের কাছে কী বার্তা পৌঁছায়? তাদের আমরা যদি একটি নিরাপদ পরিবেশ না দিতে পারি তাহলে সেই দায় কি আমাদের ওপর একটুও বর্তায় না? ধর্ষণের শিকার হওয়া একটি মেয়ের মনের অবস্থা যে কি হয় সেটি আমরা কখনই জানার চেষ্টা করি না। বরং তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা শুরু করি। এই সুন্দর পৃথিবীতে তার কি এমনই একটি জীবন পাওনা ছিল? একজন সুশিক্ষিত, মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ কখনই এমন গর্হিত কাজ করতে পারেন না। যে জাতির শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র উদ্দেশ্য আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়া সে জাতি আর যাই হোক শিক্ষা গ্রহণ করে সুশিক্ষিত হবে এটা ভাবাও দুরূহ। পাশাপাশি নিজেদের সংস্কৃতিকে বর্জন করে অন্য দেশের সংস্কৃতিকে অধিকতর প্রাধান্য দেয়াটাও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। আর এর ফলেই সংঘটিত হচ্ছে নানা ধরনের অপকর্ম, ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে ধর্ষণের হার। এখন পত্রিকার পাতা খুললেই ৪-৫টা ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসে। আগের যে কোনো সময়ের থেকে বর্তমান পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠেছে। আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। দুই-তিন বছরের শিশুরাও তাদের থাবা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এভাবে একটি সমাজ বেশিদিন চলতে পারে না। এই দুষ্টচক্র থেকে বের হতে হলে আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে, আমাদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে, যে শিক্ষা আমাদের চরিত্র ও মনন গঠনে সহায়তা করে সে শিক্ষাকে গ্রহণ করতে হবে। অবসরে আমাদের বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে নিয়োজিত করতে হবে। বিভিন্ন ভালো কাজে সময় ব্যয় করতে হবে। যে বিনোদন আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না তাকে বর্জন করতে হবে। পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখতে হবে। ধর্মীয়চর্চা বাড়াতে হবে। ধর্ষণের শাস্তি মৃতু্যদন্ড করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা যেতে পারে। কঠোর আইন এবং আইনের বাস্তবায়ন এই ঘৃণ্যতম কাজটির হার অনেকটা কমিয়ে আনবে বলে আমার ধারণা। পাশাপাশি ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে যেন দীর্ঘসূত্রিতা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশের একটি উলেস্নখযোগ্য জনগোষ্ঠী অনিরাপদ থাকলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষ যেন সুস্থ, সুন্দর এবং নিরাপদভাবে বেড়ে উঠতে পারে সে নিশ্চয়তা আমাদেরই দিতে হবে। আর এর জন্য সবার সচেনতা আর সহযোগিতা প্রয়োজন। পাশাপাশি ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তিই পারে এই অপরাধের সংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে। আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা কৃষি অনুষদ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়