ট্রেন যাত্রীদের নজিরবিহীন ভোগান্তি পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় নজিরবিহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতি কতটা উৎকণ্ঠার তা সহজেই অনুমান করা যায়। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ট্রেন চালানোর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের (রানিং স্টাফ) কর্মবিরতিতে দুর্ভোগে পড়েন সারাদেশের যাত্রীরা। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে- মঙ্গলবার সকালে ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর এবং ঢাকার বাইরে রেল চলাচলকারী জেলার স্টেশনগুলোতে গিয়ে যাত্রীরা জানতে পারেন, ট্রেন চলবে না। কোথাও কোথাও ট্রেন চলাচল শুরু করলেও মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকাসহ কয়েকটি জেলা থেকে রেলের যাত্রীদের একাংশকে বিআরটিসি বাসে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে সব জায়গায় এমন ব্যবস্থা ছিল না। সারা দিনই চলে কর্মবিরতি। এতে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় বাসে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। জানা যায়, এই সুযোগে বাসমালিক ও শ্রমিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। ফলে, যাত্রীদের ব্যয়ও বেড়ে যায়। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা রাজশাহী রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালান। তাদের অভিযোগ ছিল যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন রেলকর্মীরা। যে কোনো ধরনের দাবি কিংবা সংকট নিরসনে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান জরুরি। কিন্তু যাত্রীরা যদি জিম্মির শিকার হন, নানা দুর্ভোগে পড়নে; তবে তা কতটা উদ্বেগের সেটি আমলে নিতে হবে। এই ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, রেলের কর্মীদের মধ্যে যারা ট্রেন চালানোর সঙ্গে যুক্ত, তারা ২২ জানুয়ারি এক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন। তাদের দাবি, আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে আগের মতো বাড়তি ভাতা ও বাড়তি অবসর সুবিধা- যা ২০২২ সালে অনেকটা কাটছাঁট করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বলা হয়, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আগের চেয়ে কম বাড়তি ভাতা পাবেন। আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তি তুলে ধরেছিল যে অন্য কোথাও এ ধরনের ভাতা নেই। রেলে ২৫ হাজারের মতো কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে ট্রেন চালানোর সঙ্গে যুক্ত দুই হাজারের মতো কর্মী। তারা ভাতা কাটছাঁটের প্রতিবাদে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল আট ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ওই সময় ট্রেন বন্ধ ছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা আর ট্রেন বন্ধ রাখেননি। নিজেদের দাবিও আদায় করতে পারেনি। এবার অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিল। তবে, তারা আগে দাবি মানার শর্ত দেয়। সরকার তা মানেনি। ফলে, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা যাত্রীদের জিম্মি করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। লক্ষণীয়, রেলওয়ে রানিং স্টাফদের দাবি পূরণের আশ্বাসে দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। কিন্তু খবরে জানা যায়, ট্রেন চলাচল শুরু হলেও শিডিউল বিপর্যয়ে নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বুধবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে প্রতিটি ট্রেনই স্টেশনটি ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দুই ঘণ্টা পর এই তথ্যও সামনে আসে। সর্বোপরি, যে কোনো দাবি দাওয়া বা সমস্যাকে সামনে রেখে যাত্রী ভোগান্তি কাম্য নয়। সংকট সমাধানে গ্রহণযোগ্য উপায় আলাপ-আলোচনা করতে হবে। কিন্তু যাত্রী জিম্মি বা ভোগান্তির ঘটনা পরিতাপের, এর পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগী হতে হবে। এমনিতেই ট্রেনে দুর্ঘটনা, যাতায়াত নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের অভিযোগ বিদ্যমান। আবার এভাবে যাত্রী ভোগান্তি সৃষ্টি হবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তৎপর হওয়া জরুরি।