মানবাধিকার

উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসানই কাম্য

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে নাজুক, তা নানান সময়ে আলোচনায় এসেছে। দেশে সুশাসন ও আইনের শাসনের ঘাটতির বিষয়টিও আলোচিত। বিগত কয়েক বছর ধরেই সচেতন মহল থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম, অপহরণ, নারীনির্যাতন, ধর্ষণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া মনোভাব, মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক নিরাপত্তা সূচকের ক্রমাবনতি নিয়ে অনবরত কথা বলা হচ্ছে। এবার মানবাধিকার পরিস্থিতি ও সংকুচিত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্য সরকারের 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি রিপোর্ট-২০১৮'-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে এ তথ্য। বিষয়টি শঙ্কাজনক এক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে বলেই প্রতীয়মান হয়। বরাবরই লক্ষ্য করা যায়, দেশি বা বিদেশি কোনো সংস্থা দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করে বলা হয়, তাদের প্রতিবেদন মোটেও সঠিক নয়। যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিবেদন নিয়েও হয়তো সরকারের ভাষ্য থাকবে। তবে আশঙ্কার বিষয় যে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান অস্বীকার করলে এসব সমস্যার সমাধান বা এসব অপকর্ম হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হচ্ছে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা একদিকে যেমন প্রশ্রয় পেয়ে যায়, অন্যদিকে এক ধরনের দায়মুক্তিও পায়। ফলে তারা আরও দুর্বিনীত হয়ে উঠে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভীতিকর পরিস্থিতি বা জনগণকে ভীত রেখে কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী, তা এসব সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ না পেলেও সচেতন এবং সাধারণ মানুষের অজানা নয়। যারা ভুক্তভোগী তারা এবং তাদের এলাকার মানুষ আরও বেশি জানে। ফলে এমন অবস্থার অবসানই প্রত্যাশিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে এসেছে। বিদ্যমান এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যদি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকুচিত হয়ে পড়ে, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছিলেন, 'আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। সেই তুলনায় নাগরিক অধিকার এবং রাজনৈতিক অধিকার পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।' বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেই আমরা মনে করি। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত একেকটি দেশের সরকার। সরকার তার প্রশাসনিক ও বিচারিক কাঠামোকে সঙ্গী করে মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। সমাজের কোনো স্তরে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রম্নত সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং অন্যায়কারীকে বিচারপ্রক্রিয়ার অধীনস্থ করবে। বিচার বিভাগ সব দিক বিচার করে অপরাধীকে শাস্তি দেবে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে, আর যুক্তরাজ্য তার প্রতিবেদনে এমনটিই তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব বিরোধী দলের অংশগ্রহণ উৎসাহব্যঞ্জক আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের সময় গ্রেপ্তারসহ নানারকম বাধা তৈরির বিষয়টি উলেস্নখ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য স্বস্তিদায়ক নয় বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। সর্বোপরি বলতে চাই, যেহেতু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানাচ্ছে, সেহেতু সরকারের কর্তব্য হওয়া দরকার, তথ্য দিয়ে তথ্য মোকাবেলা করা। বলা বাহুল্য, সরকারের চেয়ে ভালো তথ্য আর কেউ তুলে ধরতে পারবে না। যেসব সংস্থা বা দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে, তাদের তথ্যে যদি ভুল-ভ্রান্তি থাকে, তবে তা সরকারের নিজস্ব তথ্য দিয়ে খন্ডন করাই শ্রেয়। আমরা মনে করি, দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিসহ সার্বিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা অপরিহার্য। প্রত্যাশা থাকবে, সরকার মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে পরিস্থিতিগত উন্নয়নে মনোনিবেশ করবে।