বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে

স্বস্তিকর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে

প্রকাশ | ১০ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিদেশিদের কাছে বেশ আশা জাগানিয়াও বটে। গতকাল যায়যায়দিনের খবরে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৩৯.২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ২০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছিল। এই অর্থবছরের (২০১৮-১৯) একই সময়ে এসেছে ২৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। হিসাব অনুযায়ী, নয় মাসে এফডিআই বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যদিকে এই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ দেশে এসেছে ৪৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি সার্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বোদ্ধারা। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রণোদনা ও বিভিন্ন উৎসাহমূলক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে অনেক খাতে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে বিদেশিরা। বিদেশিদের মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিধিবিধান শিথিল করা হয়েছে। মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির অবচয় সুবিধা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে তারা। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের একটি কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) প্রতিষ্ঠার অনুমতি দান। এসব সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো। এখন যেহেতু জানা যাচ্ছে, সরকারের এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, ফলে বিষয়টির স্বস্তিদায়ক। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকেই বিনিয়োগ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দেশে মোট নিট এফডিআই এসেছে ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; যা ২০১৭ সালের তুলনায় ১৪৬ কোটি ডলার বা ৬৭.৯০ শতাংশ বেশি। গত বছর দেশে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার মধ্যে ইকুইটি মূলধন বা নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আর এসব বিনিয়োগের এক-তৃতীয়াংশই এসেছে বাংলাদেশে কার্যরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে। তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান, চাকরির বাজার তৈরি ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের দিকে নজর দিয়ে এই বিনিয়োগ আরও বাড়ানো দরকার বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিনিয়োগে গতি ফেরাতে যেসব খাতে বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে এবং হচ্ছে, তা সময়মতো বাস্তবায়নের দিকেও নজর দেয়া অপরিহার্য। স্বীকার করতে হবে, দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার তৎপর। যার বড় প্রমাণ স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ। সামাজিক সূচকেও দেশটির অগ্রগতি আশাপ্রদ। এখন দ্রম্নত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে অর্জিত প্রবৃদ্ধি টেকসই করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে বিনিয়োগের অংশ ৩৫-৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যা বর্তমানের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। এ অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা অধিক। এ ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। উলেস্নখ্য, এটা অনেকবারই আলোচনায় এসেছে যে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সংস্কার চান। সরকারও এ ব্যাপারে তৎপর, যা আশাব্যঞ্জক। সর্বোপরি বলতে চাই, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের যে রূপকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ করতে হলে প্রতি বছর শুধু বিদেশি বিনিয়োগই প্রয়োজন ১ হাজার কোটি ডলার। কৃষি ও গার্মেন্টের মতো উৎপাদন খাতে বেশ বিনিয়োগ এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও বিদু্যৎ খাতেও নতুন বিনিয়োগ আসছে। বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আদর্শ গন্তব্যস্থল বিবেচনা করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। এগুলো আমাদের জন্য স্বস্তিকরই বটে। প্রত্যাশা করব, বিনিয়োগের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং আগামী দিনে নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করবে সরকার। দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠে তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদেরই।