পাঠক মত
চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রতি সহনশীল হওয়া জরুরি
প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মুরশিদ আলম শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের বর্তমান সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো কর্মসংস্থান সংকট। বেকারত্বের সমস্যা যেন মানুষের পিছু ছাড়ছে না। বেকারত্বের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ কত দিকেই না ছুটছে! দুঃখের বিষয় হলো, বেকার জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ ৯০ হাজার শিক্ষিত বেকার রয়েছে, যার মধ্যে ১৭ লাখ ১০ হাজার পুরুষ এবং ৮ লাখ ৮০ হাজার নারী। এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর করার প্রধান চাবিকাঠি হলো : ১. চাকরি ২. ব্যবসা বা আত্মকর্মসংস্থান। চাকরির ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি এই দুইটি উৎস রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকারদের সরকারি চাকরির প্রতি একটি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। সাধারণত সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলো রাজধানী শহরেই অনুষ্ঠিত হয়। ফলে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরা ঢাকায় ভিড় জমায়। কিন্তু দুই-চারটি পরীক্ষা দেওয়ার পর অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ে। এর মূল কারণ হলো, চাকরির পেছনে ছোটা বেশিরভাগ প্রার্থী মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের ঢাকায় এসে পরীক্ষায় বসতে হলে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়। যেমন, কক্সবাজার থেকে একজন চাকরিপ্রার্থী ঢাকায় এসে পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইলে কমপক্ষে ৩,০০০ টাকা প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে যদি চাকরিপ্রার্থী নারী হন, তাহলে তার ঢাকায় থাকার সমস্যা তো আছেই। একটি সরকারি ৯ম গ্রেডের চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে তিনটি ধাপে পরীক্ষা দিতে হয় -প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা, এই তিনটি ধাপে পরীক্ষায় অংশ নিতে একজন প্রার্থীকে কেবল যাতায়াত বাবদ প্রায় ৯,০০০ টাকা ব্যয় করতে হয়, যা একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের এক মাসের ভরণপোষণের সমান। যেখানে চূড়ান্ত ফলাফলে সেই প্রার্থী উত্তীর্ণ হবেন কি না, সেটাও অনিশ্চিত। ফলে ওই প্রার্থী দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় বসার সাহস হারিয়ে ফেলে। এভাবে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হাজারো শিক্ষিত তরুণ বেকারত্বের গস্নানি বহন করছে। সরকার স্বল্প কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই শিক্ষিত বেকাররা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো শিক্ষিত বেকারদের হতাশা দূর করতে সহায়ক হতে পারে-
১. বিভাগীয় শহরগুলোতে বোর্ড গঠন করে চাকরির পরীক্ষার আয়োজন করা। ২. ১ম শ্রেণি, ২য় শ্রেণি ও ৩য় শ্রেণির চাকরিগুলো গ্রেড অনুযায়ী সমন্বিতভাবে পরীক্ষা নেওয়া। ৩. নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময় উলেস্নখ করা, যার মধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে।
উলিস্নখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে চাকরিপ্রত্যাশীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবে। বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়া হলে দুর্নীতি হবে- এমন ধারণা ভুল। বোর্ড গঠন করা হলে দুর্নীতির ছোঁয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। সমন্বিত ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার মতো অন্যান্য চাকরির পরীক্ষাগুলোও সমন্বিতভাবে নেওয়া হলে যাতায়াত ব্যয় ও আবেদন ফি অনেকটা কমে আসবে।
দ্রম্নত নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হলে একজন চাকরিপ্রার্থী হতাশা থেকে মুক্তি পাবে। এভাবে শিক্ষিত বেকাররা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।