শেয়ালের 'মামা'এবং রাজনীতি

শেয়াল তাৎক্ষণিক জবাব দেয়, এ লড়াইয়ে যে জিতবে সেই আমার 'মামা'। এরপর শেয়াল স্স্নোগান দিয়ে ওঠে, 'লড়াই-লড়াই চাই। এ লড়াইয়ে জিতবে কে? মামা ছাড়া আর কে!'

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

শাহীন রাজা
জঙ্গলে ছিল এক বাঘ। আর সেই জঙ্গলের জলায় বাস করত এক কুমির। ওই জঙ্গলে একটা খেকশেয়ালও ঘর বাঁধে। শেয়াল সব সময় আতঙ্কে থাকে। ডাঙায় বাঘ। আর জলে কুমির। সারাদিন ছোট-বড় যাই শিকার করুক না কেন শেয়াল, তার বড় অংশ বাঘ এবং কুমিরকে দিতে হয়। তা না হলে বাঘ শেয়ালকে জঙ্গল থেকে বের করে দেবে। কিংবা খেয়েও ফেলতে পারে। কুমির আগেই জানিয়ে দিয়েছে, জল পান করতে হলে জলের ট্যাক্স দিতে হবে। যদি না দাও, তাহলে জল খেতে এসো না। খালি হাতে এলে তোমার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে। শেয়ালের আর কি করা! দুই মহাজনকে জোগান দিয়ে যাচ্ছে। সারাদিন জঙ্গলে ছোটাছুটি করে শিকার করতে করতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্ষুধা আর ক্লান্ত দেহ নিয়ে বাঘ আর কুমিরকে দিনের ট্যাক্স দিয়ে তারপর মুখে আহার তুলতে হয়। এ জীবন আর ভালস্নাগে না শেয়ালের। ভাবতে থাকে, যেভাবেই হোক এ থেকে মুক্তি পেতে হবে। শেয়াল ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসে, দু'জনের মধ্যে স্থায়ী বিবাদ লাগিয়ে দিতে হবে। তাহলেই সে মুক্ত। কেননা, বাঘ আর কুমির সব সময় ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকবে। ঝগড়া বাদ দিয়ে তার দিকে আর নজর দেওয়ার সময় পাবে না। কিন্তু দু'জনের মধ্যে ঝগড়া লাগাবে কি করে। শেয়াল আবারও ভাবতে বসে যায়। ভাবতে, ভাবতে এক সময় শেয়াল হঠাৎ চিৎকার করে বলতে থাকে, পেয়েছি, পেয়েছি। পরদিন সকালে নাদুস নুদুস কয়েকটা খরগোশ শিকার করে বাঘের সামনে হাজির হয়। দূর থেকেই বাঘকে সালাম দেয়। বাঘ তো সুন্দর উপঢৌকন পেয়ে খুবই খুশি। :ভাগ্নে দিন তো তোমার ভালোই যাচ্ছে। : মামা, সবই আপনার আশীর্বাদ। : তা ভাগ্নে কিছু বলবে মনে হচ্ছে? : হঁ্যা, তবে সাহস দিলে বলতে পারি। : বল ভাগ্নে, বল। আজ তুমি আমার পছন্দের খাবার নিয়ে এসেছ। : মামা, এই জঙ্গলের রাজা কে? : কেন, আমি। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ আছে? : না, মামা। তবে, সেদিন জল খাওয়ার সময় কুমির বলল- বাঘকে বলিস, এবার জল খেতে এলে ওকে টান মেরে সোজা জলের গভীরে নিয়ে যাব। : কি ! এত বড় সাহস ! ডাঙায় আসুক। ওকে চিবিয়ে, চিবিয়ে খাব। পরদিন সকালে শেয়াল কুমিরের জন্যও একই উপঢৌকন নিয়ে যায়। কুমিরের কাছেও বাঘকে যা বলছে, তাই বর্ণনা করে। কুমিরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, বাঘ জল খেতে আসুক। একটানে মাঝ জলায় নিয়ে যাব। এরপর কোনো একদিন। আলো ঝলমলে দুপুর। বাঘ এবং কুমির মুখোমুখি হয়ে যায়। আর যায় কোথায়! দেখা হওয়া মাত্র যুদ্ধ আর যুদ্ধ। যুদ্ধ দেখে শেয়াল দূর থেকে বলে উঠে, মামা জিন্দাবাদ, মামা জিন্দাবাদ। আর হাততালি দিয়ে নাচতে থাকে। কাঠবিড়ালি শেয়ালের নাচ দেখে বলে ওঠে, পন্ডিত মশাই দু'জনেই তো লড়াই করছে। এর মধ্যে কে আপনার মামা। শেয়াল তাৎক্ষণিক জবাব দেয়, এ লড়াইয়ে যে জিতবে সেই আমার 'মামা'। এরপর শেয়াল স্স্নোগান দিয়ে ওঠে, 'লড়াই-লড়াই চাই। এ লড়াইয়ে জিতবে কে? মামা ছাড়া আর কে!' এরপর থেকে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আর শেয়াল হাততালি দিয়ে চলছে। যখন যে জিতে, তখন সেই শেয়ালের মামা হয়ে যায়। শাহীন রাজা :হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন