পাঠক মত

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নীতি-নৈতিকতার পরাজয় নীতি ও নৈতিকতা দুটি শব্দ ব্যাপক অর্থ বহন করে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজে কিছু না কিছু নীতি ও নৈতিকতা থাকা আবশ্যক। ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও সমাজে আদর্শিকভাবে নীতি আর নৈতিকতা বিলুপ্ত হলে সেসব প্রতিষ্ঠান রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। নৈতিক আদর্শ অথবা কতিপয় চরিত্র গুণাবলি না থাকলে প্রতিষ্ঠান সমাজ বা রাষ্ট্র টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। আমরা যে দেশে বসবাস করছি সে দেশের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজে কী পরিমাণ নীতি-নৈতিকতা লালন-পালন করছে সে বিষয়ে আলোকপাত করতে যাচ্ছি। ব্যক্তি, পরিবার সবখানে একটা নীতি, আদর্শ ও নৈতিকতা থাকা চাই। আরও থাকা চাই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান, কারিগর তাদেরও নৈতিকতা থাকা চাই। আমরা বইপুস্তকে মনীষীদের লেখায় নৈতিক মূল্যবোধ, চরিত্র, আলোকিত আদর্শের কথা পড়েছি। সে নীতি-নৈতিকতা এখন পুস্তকেই শোভা পাচ্ছে। যারা এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের রপ্ত করাবেন তাদের কাছেও ওইসব বিষয় অনুপস্থিত। একজন শিক্ষার্থী নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে পদচারণা করলেও বাস্তবে শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে সে শিক্ষা পাচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে অনৈতিক কর্মকান্ড ও চরিত্র ধারণ করে পশুর আচরণ নিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে ছাত্রত্ব শেষ করছে। ফলে তার জীবন ধ্বংস, সে সঙ্গে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে করছে কলুষিত। এভাবে সমাজের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা এখন নৈতিকতার পরাজয়ের শেষ প্রান্তরে পৌঁছেছে। সমাজের কোনো সেক্টরে নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধের অবস্থান নেই বলা যায়। দোকান থেকে বাজার, মার্কেট, ক্রেতা, বিক্রেতা নেই কোনো ভালোবাসা আর আদর্শিক নৈতিকতা। কে কাকে কী পরিমাণ ঠকিয়ে ধোঁকা দিয়ে মিথ্যা ছলচাতুরীর মাধ্যমে অর্থ কব্জা করা যায় সেটায় এখন আমাদের অন্যতম চরিত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে। একটা পণ্যের কী পরিমাণ ন্যায্যমূল্য সেটা কম-বেশি সব ক্রেতার ধারণা থাকে। দেখা যায়, বিক্রেতা ১০০ টাকার একটা পণ্যের মূল্য হাঁকালো এক হাজার টাকায়। তাহলে এটাকে পণ্যের ন্যায্যমূল্য হিসেবে আখ্যায়িত করবেন, না কি ডাকাতি বলবেন। এভাবে সব মানুষ কোনো না কোনো খানে অনৈতিকভাবে প্রতারণার শিকার। সমাজের কোথাও অথবা কোনো সেক্টরে নীতি-নৈতিকতার আদর্শ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কে কার চেয়ে বেশি টাকা আয় করবে সেটায় এখন আমাদের অন্যতম টার্গেট। ধর্মের আবরণে অবৈধ অনৈতিক অপকর্ম সেটা যেন অভ্যাসে পরিণত। ধর্ম যেখানে নীতি-নৈতিকতার প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল সেখানে উল্টোটা সমাজ দেখছে। যাদের থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ নীতি-নৈতিকতা গ্রহণ করার কথা ছিল তাদের কারও কারও অনৈতিক কর্মকান্ডে স্বয়ং ধর্ম পর্যন্ত এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্ম রক্ষা করতে পারছে না ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে। ধর্ম শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ। আর সব কাজকর্মে অনৈতিকতায় ডুবে আছে পুরোসমাজ। তাহলে এ সমাজের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সব শাখা-প্রশাখায় অনৈতিকতায় নিমজ্জিত। তাহলে নৈতিকতা কোথায় গেল। নৈতিক মূল্যবোধ আর চরিত্র এভাবে যদি সমাজ থেকে হারিয়ে যায় তাহলে এ সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী ধারণ করে বাঁচবে সেটাই এখন স্বল্পসংখ্যক আলোকিত আদর্শিক মানুষের ভাবনা। নীতি-নৈতিকতায়, সমাজ, রাষ্ট্র হারিয়ে যায় বেশিদিন দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা অগ্রগতি থাকবে না। সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি থেকে পরিবার ও রাষ্ট্র পর্যন্ত সবখানে নীতি-নৈতিকতার লালন-পালন ও প্রতিষ্ঠা থাকতে হবে। এ কয়েকটি শব্দকে বাদ দিয়ে কোনো অবস্থায় সুশৃঙ্খল ও আদর্শিক সমাজ আশা করা যায় না। সবচেয়ে বেশি মূল্যবোধের অবক্ষয় ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যেখান থেকে মূল্যবোধের চর্চা অনুসরণ আর প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা ছিল সেখানে এখন চরমভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয়। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে নীতি-নৈতিকতাবিরোধী পথ ও পন্থা পরিহার করতে হবে। তাহলে হয়তো পর্যায়ক্রমে পরিবার ও সমাজ আলোর পথ দেখতে পারে। মাহমুদুল হক আনসারী চট্টগ্রাম