ভিক্টর হুগো ছিলেন একজন ফরাসি সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী। তাকে উনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী রোমান্টিক লেখকও বলা হয়ে থাকে। তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যে আছে লে মিজারেবল ও দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটর ডেম। ভিক্টর হুগোর সময়ের বহু তরুণ লেখকের মতো তিনিও গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন রোমান্টিসিজম নামক সাহিত্যিক ধারার অগ্রপথিক এবং ১৯ শতকে ফ্রান্সের প্রখ্যাত চরিত্র ফ্রঁসোয়া রনে দ্য শাতোব্রিয়ঁ দ্বারা। হুগো যৌবনে এ প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন যে, তিনি হয় শাতোব্রিয়ঁর মতো হবেন অথবা কিছুই হবেন না। শাতোব্রিয়ঁর মতো তিনিও রোমান্টিসিজমের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যান, রিপাবলিকানিজমের সমর্থক হিসেবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং রাজনৈতিক মনোভাবের কারণে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। রচনায় এরকম অকালপক্ব আবেগ এবং বাগ্মিতার কারণে অল্প বয়সেই সাফল্য এবং খ্যাতি অর্জন করেন। প্রথম কবিতা সংকলন 'ওডেস এট পয়েসেস ডাইভারসেস' প্রকাশিত হয় ১৮২২ সালে- যখন তার বয়স ছিল মাত্র ২০। এ গ্রন্থের কারণে তিনি অষ্টাদশ লুইয়ের কাছ থেকে রাজকীয় ভাতা লাভের সম্মান পান। যদিও এ বইটি স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের জোয়ারের কারণে প্রশংসিত হয়েছিল, তবে ১৮২৬ সালে প্রকাশিত বই 'ওড টু ব্যালাডস' তাকে একজন মহান কবি, সুরকার এবং গীতিকার হিসেবে সবার কাছে উন্মোচিত করে। ভিক্টর হুগোর পুরো নাম ভিক্টর মারি হুগো। ১৮০২ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি তিনি ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা। কবিতা, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি সাহিত্যের অনেক দিকেই ছিল হুগোর বিচরণ। এগুলোর পাশাপাশি তিনি ৪ হাজারেরও বেশি চিত্রকর্ম এঁকেছিলেন। হুগোর শৈশব কেটেছে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে। যেহেতু তার একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, তাই পরিবার নিয়ে প্রায়ই তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতে পারতেন। হুগো এই ভ্রমণগুলো থেকে অনেক কিছু শিখেছিলেন। এই শেখাগুলো পরবর্তী সময়ে তার সাহিত্যে ফুটে ওঠেছিল। ১৮৭৮ সালের ১৮ জুন হুগো মাইল্ড স্ট্রোক করেন। এই স্ট্রোক তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার জানান, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একদমই কম। উনবিংশ শতকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে ফলাফল হিসেবে মৃতু্যকেই মেনে নিত। ১৮৮৫ সালের ২২ মে ভিক্টর হুগো মৃতু্যবরণ করেন।