অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি
প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সরকার যায়, সরকার আসে। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটের টিকলিটাও কেউ ছুঁতে পারেন না, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ- ফিড, মুরগি, ডিম ও মুরগির বাচ্চা ঘিরে বাজারে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের অসাধু চক্র গত ছয় মাসে ৯৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই দাবি করেছে স্বয়ং বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠটির দাবি, পোল্ট্রি খাতে সরকারের কোনো নজর না থাকায় এই অরাজকতা তৈরি হয়েছে। তবে, সরকার চাইলে এই ফিড-মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব।
আমরা মনে করি, এইভাবে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মতো অরাজকতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে, বিপিএ'র দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। উলেস্নখ্য, গত শনিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে যেসব তথ্য জানিয়েছেন বিপিএ সভাপতি- তা খতিয়ে দেখে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অরাজকতা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। এটা আলোচনায় এসেছে যে, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কিন্তু এরপর সরকারি পর্যায়ে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করতে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বড় গ্রম্নপগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এমনকি পরিকল্পিতভাবে শবেবরাত, রমজান, ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে বাজারে সংকট তৈরি করে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত মুরগির বাচ্চার দাম ব্রয়লার ৪৯ টাকা এবং লেয়ার ৫৭ টাকা হলেও কোম্পানিগুলো এসএমএসের মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা এবং কখনো কখনো ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করছে। সে হিসাবে এই খাতের সিন্ডিকেট চক্র গত ৬ মাসে ৯৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে অসাধু চক্রের নানা তৎপরতা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। ফলে, এই বিষয়কে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। যে কোনো সিন্ডিকেট সরকার বা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়াবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যখন এই অভিযোগ উঠে আসছে মুরগির বাচ্চার বাজারে সিন্ডিকেটভুক্ত একাধিক বড় কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছামতো মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়, তখন এটি আমলে নিয়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, মুরগির বাচ্চার কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হলে, স্বাভাবিকভাবেই খামারিরা বেশি দামে বাচ্চা কিনতে বাধ্য হন। প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্যে বাচ্চা ও ফিড কিনতে পারছেন না, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিন দিন উৎপাদন থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৫০-৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান, এটা যখন জানা যাচ্ছে- তখন তা কতটা উৎকণ্ঠার সেটাও অনুধাবন করতে হবে।
বিপিএ সভাপতি সিন্ডিকেট চক্র থেকে ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ষায় যে দাবি জানিয়েছেন সেটা আমলে নিতে হবে। তার দাবি অনুযায়ী, সিন্ডিকেট ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ত চুষে নিচ্ছে। অন্যদিকে, গত দুই মাসে দেশের ৯০ শতাংশ খামারি ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সবাই আশা করেছিল, ঈদে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণকারীগোষ্ঠীর কারণে সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে- এমন অভিযোগ উঠে আসছে। ফলে, এই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
সর্বোপরি জানা যায়, দাম বৃদ্ধির পেছনে একমাত্র দায়ী হচ্ছে মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সংকট তৈরি করে এবং বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোনোভাবেই সিন্ডিকেট যেন ইচ্ছামতো দাম বাড়াতে না পারে, অযৌক্তিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে- সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।