ফরম পূরণের সঙ্গে অগ্রিম বেতন আদায় পরীক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিন

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সুশিক্ষার বিস্তার জরুরি। শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এছাড়া, যদি শিক্ষার্থীদের 'জিম্মি' করে অর্থ আদায়ের মতো ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। খবরে প্রকাশ, চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন। স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখন ফরম পূরণে ব্যস্ত। কিন্তু জানা যায়, শিক্ষা বোর্ডের 'দায়সারা' বিজ্ঞপ্তিকে ঢাল বানিয়ে তাদের কাছ থেকে সাত মাসের বেতনের টাকা একসঙ্গে আদায় করা হচ্ছে। এতে করে অল্প সময়ে অনেকে একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো সন্তানের ফরম পূরণের সঙ্গে অগ্রিম বেতন পরিশোধে দিশাহারা। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আবদারে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষাঙ্গনে যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধ করা জরুরি। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের আর্থিক পরিস্থিতিকেও উপেক্ষা করা যাবে না। হঠাৎ করে একসঙ্গে বেশি টাকা অনেক পরিবারের পক্ষেই জোগাড় করা সম্ভব নয়। ফলে, একসঙ্গে বেশি টাকা আদায়ে অভিভাবকরা যেমন চাপ অনুভব করছেন। তেমনি দরিদ্র পরীক্ষার্থীর ওপর মানসিক চাপও সৃষ্টি হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা যোগাড় করতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। উলেস্নখ্য, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর পরও কলেজ থেকে কেন মাসিক বেতন চাওয়া হচ্ছে, তার কারণ বুঝতে পারছেন না তারা। আবার তা একমাসের নয়, তিন মাসের বাড়তি বেতন নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাত মাসের বেতনের টাকা একসঙ্গে অগ্রিম আদায় করা হচ্ছে। জানা যায়, অগ্রিম বেতন পরিশোধ না করলে আটকে দেওয়া হচ্ছে ফরম পূরণ। ফরম পূরণে বাড়তি ও অগ্রিম বেতনের টাকা নেওয়া বন্ধে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চান শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোগী হবে এমনটি প্রত্যাশিত। বলা দরকার, ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সব শিক্ষাবর্ষে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। সেসব বাদ দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। ফলে ১৫ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরম পূরণের সময় আদায় করা হচ্ছে অগ্রিম বেতন। তথ্য মতে, গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ড এইচএসসির ভর্তি ফরম পূরণের নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়, ২ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে হবে। কিন্তু ফরম পূরণের ফি'র সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন আদায় করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনেই তারা মোট ২৪ মাসের (একাদশ-দ্বাদশ) বেতন নিচ্ছেন। জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশের প্রায় সব কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অগ্রিম বেতন আদায় করা হচ্ছে। সর্বোপরি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ক্ষোভের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া একসঙ্গে এত টাকা আদায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের একরকম জিম্মি করা এমন অভিমত উঠে আসছে। ফরম পূরণে অগ্রিম বেতন আদায়কে শিক্ষার নীতিহীন ব্যবসা মনে করছেন কেউ কেউ। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সুশিক্ষার বিস্তারে সুচিন্তিত, দুরদৃষ্টির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীর আর্থিক পারিস্থিতি ও সামর্থ্যের বিষয়ও এড়ানো যাবে না। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিতে হবে। সামগ্রিক অবস্থা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।