কারাগারে খালেদা, মনে নেই বিএনপির

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

আবু জাফর সিদ্দিকী ঢাকা
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের প্রায় দেড় বছর চলছে। নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত ৭২-ঊর্ধ্ব সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তাকে নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের। নেই রাজপথের কোনো কর্মসূচি। এর আগে কিছু মানববন্ধন ও ঘরোয়া কর্মসূচি দিয়েছিল দলটি। তাও এখন নেই। এত দিনেও রাজপথের 'শক্ত' কোনো কর্মসূচিতে যাননি বিএনপির হাইকমান্ড। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গিয়েছিল বিএনপি। খালেদার মুক্তি আন্দোলনের কিছুই হয়নি। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তিতে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা রাজপথের 'কঠোর' কর্মসূচি চান। তবুও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই দলটির নীতি-নির্ধারকদের। গত বছরের ৮ ফেব্রম্নয়ারি দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে কারাবন্দি হন তিনি। দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য আইনি পথে হাঁটছে বিএনপি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। আর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। তবে আইনি ও আন্দোলন দুটো পথ বেছে নেয়া হলেও কোনোটি থেকে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি বিএনপি। এর মধ্যে খালেদা জিয়াকে ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির ভরাডুবির পর দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এমনকি সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন বিএনপি তাহলে কী করবে। কারাগারে থেকেই খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব দেবেন না কি তার মুক্তির জন্য বিএনপি কঠোর আন্দোলনে যাবে। দলের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিএনপি কি খালেদা জিয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করবে। আর সেটা চাইলে কী দিয়ে হবে সেই সমঝোতা? বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের জেল দিয়েছেন আদালত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেন। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদন্ড দেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা রিভিশন আবেদনের রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে দেন। দলের চেয়ারপারসন দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে, সেখানে বিএনপি বড় ধরনের কোনো জনমত তৈরি করতে পারেনি। তাদের দাবির প্রতি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বিএনপি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। মহানগর, ওয়ার্ড, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় মিলিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীর অভাব নেই। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার দিন মগবাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল ছাড়া সারাদেশের কোথাও একটি বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেনি দলটি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির নেতারা প্রতীকী অনশন, মানববন্ধন, সেমিনার, বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করতে বৈঠক করা ছাড়া রাজপথে কোনো আন্দোলন করতে পারেননি। যদিও মাঝে মাঝে বিএনপির কিছু নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বললেও সময়ের সঙ্গে আজ খালেদা জিয়ার কোনো খবর রাখছে না কেউ। আসলেই কী সবাই ভুলে গেল খালেদা জিয়াকে?