নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি নয়

বাংলাদেশিদের সতর্কতা

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত ভূমধ্যসাগর। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩,০০০ মানুষ মারা গেছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে বাংলাদেশিসহ অর্ধ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এমন অবস্থায় অবৈধ পথে ইউরোপে ঢোকার উদ্দেশে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশিদের সতর্ক করেছে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয় বাংলাদেশিদের। সম্প্রতি লিবিয়া উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার পথে অনেক বাংলাদেশি নিহত হন। আরেকটি নৌকায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৭৫ নাগরিক ইউরোপের পথে যাত্রার চেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে যাত্রার সময়ে অকালে প্রাণ দিয়েছেন অনেকেই। উলেস্নখ্য, ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অভিবাসনের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই লিবিয়ার বাংলাদেশের দূতাবাস বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। আমরা মনে করি এই ধরনের সতর্কতা সময়োপযোগী ও যৌক্তিক। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে যাবে, কার মাধ্যমে যাবে, কোন পথে কোন দেশে যাবে- এসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে জানতে হবে। এর যে কোনো একটির ব্যতিক্রম হলে প্রতারণার আশঙ্কা থাকবেই। অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেতে চাইলে, বিদেশে কাজের সন্ধান দেয়া তো দূরের কথা, টাকা হাতিয়ে নিয়ে মাঝপথেই পালিয়ে যায় প্রতারকরা। বিনা টাকায় অথবা কম টাকায় বিদেশে পাঠানো হবে, এ ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে থাকে পাচারকারীরা। ইতোমধ্যে জাল পাসপোর্ট, অবৈধ বা ভুয়া কাগজপত্রসহ বিদেশে ধরা পড়ে জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন অনেকেই। এসব কারণে জায়গা-জমি বিক্রি করে দেয়া টাকা, উচ্চ সুদে ঋণের টাকা জলাঞ্জলি দিয়ে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কেবল ২০০৮ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। এটা সত্য, অবৈধ উপায়ে বিদেশ গমন করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। বাংলাদেশে যদি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকতো, তা হলে এভাবে মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাওয়া লাগত না। আমরা চাই সরকার এ ব্যাপারে দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুক। সরকার যদি ব্যাপকভাবে শিল্পায়নের দিকে বিশেষ নজর দেয় তা হলে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে। এর পাশাপাশি যেসব দালাল ও অপরাধী এর সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এটা করা সম্ভব না হয় তবে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃতি হতেই থাকবে। এটাও স্মরণ রাখতে হবে, যারা এর আগে নৌকাডুবিতে মারা গিয়েছেন তারা প্রত্যেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা দালালদের দিয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা হয় ফসলি জমি ভিটাবাড়ি বিক্রি করে না হয় ঋণ করে জোগাড় করেছিল। ওই পরিবার এখন নিঃস্ব সর্বস্বান্ত শোকগ্রস্তত্ম। একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পুরো পরিবার পথে বসে গেল। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির শিকার হয়ে কত স্বপ্নের সম্ভাবনার অকাল মৃতু্য হলো তা বলে শেষ করা যাবে না। এর দায় কে নেবে? আমরা এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর দেখতে চাই না। অতি দ্রম্নত এর এটা যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছতেই হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।