তিতাসের ঝুঁকিপূর্ণ বিতরণ লাইন
কার্যকর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ১১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
গ্যাসের জরাজীর্ণ লাইন, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগের কারণে যদি একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে এবং দীর্ঘ হতে থাকে মৃতু্যর মিছিল- তবে তার ভয়াবহতাকে আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, তিতাসের বিতরণ লাইনের ৬৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ! নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়া, পরিস্থিতি এমন, যেন ঘর থেকে পথ- সবখানেই মৃতু্যফাঁদ! অন্যদিকে, গ্যাসের জরাজীর্ণ লাইন, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগই শুধু নয়, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ভয়াবহ ঝুঁকিতে শত শত কলকারখানা। এক্ষেত্রে শঙ্কার বিষয় হলো, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জরাজীর্ণ লাইন পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেই কোনো। রহস্যজনক কারণে এ ব্যাপারে টনকও নড়ছে না কারো। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি দ্রম্নত আমলে নিতে হবে।
আমরা বলতে চাই, সার্বিকভাবে যে তথ্য উঠে আসছে তা খতিয়ে দেখে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কেননা, গ্যাসের জরাজীর্ণ লাইন, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগের কারণে দুর্ঘটনা ঘটবে, দীর্ঘ হবে লাশের সারি এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। তথ্য মতে, দেশের ৬৫ শতাংশ গ্যাস বিতরণ লাইনই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, স্থাপিত লাইনের অর্ধেকের মেয়াদ পেরিয়েছে অনেক আগে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ সংযোগ ও লাইন স্থাপন- যা গ্যাস নেটওয়ার্ককে করে তুলেছে অনিরাপদ। ফলে, একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। যে বিষয়গুলো উঠে আসছে স্বাভাবিকভাবেই তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও কারো টনক নড়ছে না এটা পরিতাপের। সর্বশেষ রোববার ভোরে চাঁদপুরে গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের ছয় জন দগ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের শরীরের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে এ বিস্ফোরণ হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া, এর আগেও নানা সময়ে গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বাসায় গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দু'টি পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৮ জন দগ্ধ হন। গত রোববার পর্যন্ত এদের মধ্যে দু'জন মারা গেছে। গত ১১ নভেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় রাস্তায় গ্যাসের মেইন লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে সাত শ্রমিক দগ্ধ হন। দগ্ধদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে গ্যাস লিকেজ থেকে ১১৮টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এছাড়া, গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ১৬টি অগ্নিকান্ড ও ৫টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা তথ্য পেয়েছে।
সর্বোপরি যেসব তথ্য উঠে আসছে এবং তিতাসের বিতরণ লাইনের ৬৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ বলে যখন জানা যাচ্ছে, তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের একটি জামে মসজিদে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৩৪ মুসলিস্ন। বিস্ফোরণের এমন ভয়াবহতা ও প্রাণহানির পর জেলাজুড়ে তিতাস গ্যাস পাইপ সংস্কারের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। নেওয়া হয় নানা পরিকল্পনাও। কিন্তু এর প্রায় কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি বলেও তথ্য উঠে আসছে। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতি কতটা শঙ্কাজনক সেটা অনুধাবন করতে হবে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।