উন্নয়নের সঙ্গে মানবাধিকার থাকা চাই

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

মাহমুদুল হক আনসারী চট্টগ্রাম
জনগণের মানবিক সুখ, শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন একসঙ্গে থাকা চাই। বাংলাদেশ যে উন্নয়নের অগ্রগতিতে এগিয়ে চলছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের ব্যক্তি সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাসমূহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন "হিউমেন রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি" ২০১৮-এর এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। আইনের শাসন জনগণের মতাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা এসব প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। বাস্তবে দেশে মানবাধিকার প্রতিনিয়ত যে ভুলণ্ঠিত হচ্ছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন নাগরিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর থেকে যেভাবে সাহায্য ও আনুকূল্য পাওয়ার কথা ছিল তা কিন্তু মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের প্রশাসনের সবগুলো সেক্টর দুর্নীতিতে ভরপুর। জনগণ ঘুষ ও উৎকোচ ছাড়া প্রশাসনের কোনো সেবা পায় না। প্রশাসন বাস্তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মেনে চলে কিনা সেখানে জনগণের প্রশ্নের শেষ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়মের কোনো শেষ নেই। গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে রাস্তার চাঁদাবাজি আর দুর্ভোগের কথা বলে লিখে শেষ করা যাবে না। পরিবহন শ্রমিক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে চাঁদাবাজি করে জনগণকে চরমভাবে ভোগান্তিতে ফেলেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী আনোয়ারা চন্দনাইশ কক্সবাজার রুটে যাত্রী হয়রানির সীমা ছিল না। স্পেশাল সার্ভিস থেকে সিএনজি পর্যন্ত সবগুলো গণপরিবহনে ডাবল রিডাবলভাবে জোর জবরদস্তি এবং জিম্মি করে ভাড়া আদায় করা হয়। জনগণের আয়ের প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হয়েছে এসব রুটে। উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নাজিরহাট রুটের পরিবহনও যাত্রীদের এভাবে অমানবিক হয়রানি করার সংবাদ আছে। নগরীতে ঈদের আগে এবং পরে সিটি সার্ভিসের সবগুলো পরিবহনে ইচ্ছেমতো ডাবল রিডাবল ভাড়া আদায় করা হয়। এসব সেক্টর যেন বেপরোয়া এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করার যেন কেউ নেই। দেশের সবগুলো সেক্টর বলতে গেলে অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া। সবখানেই জনভোগান্তি আর হয়রানি। তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে আইনের শাসন আর ভোগান্তির নিস্তার খুঁজবে? না কোথাও গিয়ে বিচার পাওয়ার মতো ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছি না। অনিয়ম দুর্নীতির জনভোগান্তির অনেক কথা বহু লেখকের মাধ্যমে পত্রিকায় প্রচার পেয়েছে। বাস্তবে যেখান থেকে এসব বিষয়ের তদারকি এবং আইনানুক বিচার বিশ্লেষণ হওয়ার কথা সেখান থেকে কিছুই হচ্ছে না। তাহলে একটা দেশের জনগণ আর মানচিত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিসের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে সেখানেই অনেক কথা বলার থাকে নির্যাতিত মানুষের। কথা হচ্ছিল মানবাধিকার নিয়ে, গোটা দুনিয়ায় মজলুম মানুষের মানবাধিকার নেই বললেও বেশি বলা হবে না। পৃথিবীর মানবাধিকার ও শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ তাদের পাশে যেভাবে থাকার কথা ছিল সেভাবে এগিয়ে আসছে না। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র জনগণ দেখছে। একদিকে উন্নয়ন অগ্রগতি লাখ লাখ কিলোমিটার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন আর ডেভলপ হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের শেষ নেই। শিক্ষা, সংস্কৃতিতে প্রতিনিয়ত অগ্রগতির কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে। কিন্তু এসব উন্নয়নের সঙ্গে জনগণের মানবিক নাগরিক ও মানবাধিকারের গুণাবলির অগ্রগতি হচ্ছে না। ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিকের বিশৃঙ্খলা অশান্তি বেড়েই চলছে। মানসিক শান্তি আর শৃঙ্খলা জনগণ খুঁজে পাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপও জনগণ দেখছে না। বছরের পর বছর এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর বিশুধগার ও হয়রানি করে যাচ্ছে। আইন বিচারের সঠিক ধারাবাহিকতা রক্ষা হচ্ছে না। পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা একেবারেই নেমে এসেছে। অন্য দল ও ব্যক্তিকে ঘায়েল করতে যা যা দরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সে শক্তি ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক সব রীতিনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বলা যায়, গণতন্ত্রহীন একটি রাষ্ট্রে জনগণ বসবাস করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র আর জনগণের সুখ দুঃখের মতামত তুলে ধরার জন্য। অথচ গণতান্ত্রিক নিয়ম রীতিনীতি বাকস্বাধীনতা ক্রমেই দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার, জনগণের অধিকার স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। সত্য একদিন তার আপন গতিতে ভেসে ওঠবে এবং ভেসে আসবে। সেদিনই হবে আমজনগণের বিজয়। সে সময়ের অপেক্ষায় ধৈর্য্য রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।