রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সমর্থন জরুরি

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বে বহুল আলোচিত 'রোহিঙ্গা সমস্যা' এখন বাংলাদেশের গলার কাঁটা। গত দুই বছরে মিয়ানমারের সঙ্গে এ নিয়ে বহু দেন-দরবার এবং চুক্তি হলেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দৃশ্যত অগ্রগতি নেই। বিশ্লেষকরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে চাপ না দিলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সহজ হবে না। সত্য যে, বাংলাদেশ 'রোহিঙ্গা সমস্যা' সমাধানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতার জন্য কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য সিআইসিএ অংশীদারদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে জাতিগত নির্মূলের 'প্রকৃষ্ট উদাহরণ' উলেস্নখ করে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এর সমাধান না হলে তা পুরো এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। শনিবার তাজিকিস্তানের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত কনফারেন্স অন ইন্টারেকশন অ্যান্ড কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস ইন এশিয়ার (সিআইসিএ) পঞ্চম সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির দেয়া এ বক্তব্য অত্যন্ত সময়োযোগী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক। জাতিগতভাবে নির্মূলের অংশ হিসেবেই যে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তচু্যত করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী- তা বিশ্বনেতাদের অজানা নয়। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়াসহ এমন কোনো অন্যায় নেই যা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে করা হয়নি। ফলে প্রাণের ভয়ে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিভিন্ন জরিপ ও তদন্তের এ সত্য প্রতীয়মান হয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলেও বিপুলসংখ্যক ওই রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা। যত দিন যাচ্ছে 'রোহিঙ্গা সমস্যা' ততই প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তি হলেও, চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই দেশটির। আর এতেই দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে সংকট। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। আর এটিই উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। জানা যায়, আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়। মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা তাদের জনগণকে আশ্রয় দিয়েছে এবং খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। এটা উলেস্নখ করেই রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলাদেশ এ সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে সে জন্য সিআইসিএসহ সংশ্লিষ্টদের যে সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রপতি তা অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রসারে কাজ করে সিআইসিএ। উলেস্নখ্য, এশিয়ার দেশগুলোতে বর্তমানে জোরপূর্বক দেশান্তর, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদের মতো নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। নিয়মবহির্ভূত অভিবাসন, মাদক চোরাচালান, সীমানা বিরোধ, জাতিগত দ্বন্দ্ব বিচ্ছিন্নতাবাদ, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো যেসব সমস্যা এখানে দৃশ্যমান, তা মোকাবিলায় এ অঞ্চলের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছে কার্যকর উদ্যোগ নিলে সমস্যা সমাধানে তা সহায়ক হবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রত্যাশা থাকবে, বিশ্ব নেতারা এসব সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসবেন এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নেবেন। এ জন্য সরকারকেও আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করতে হবে কূটনীতিক তৎপরতা জোরদারের মাধ্যমে। বাংলাদেশে আশ্রিত বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে, তাদের নিজ দেশে মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করুক- এটাই আমাদের চাওয়া।