পাঠক মত

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ডাক্তারদের প্রাইভেট প্রাকটিস ও কর ফাঁকি প্রসঙ্গে বছর কয়েক আগে আমার এক আত্মীয় নেফ্রাইটিসে (কিডনি সংক্রান্ত রোগ) আক্রান্ত হলে সরকারি হাসপাতালে আশানুরূপ চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়ে ওই হাসপাতালের একজন সাবেক বিভাগীয় প্রধানের কাছে যাই ভালো চিকিৎসার জন্য। তিনি তৎক্ষণাৎ একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তির পরামর্শ দেন ও নিজে অভিজ্ঞ চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও ওই সময় কর্মরত বিভাগীয় প্রধানকেও ক্লিনিকে আমন্ত্রণ জানান এক হাজার টাকা ভিজিটের বিনিময়ে। ১০-১২ দিনের চিকিৎসায় ক্লিনিকের বিল হয় দুই লাখ টাকারও বেশি, যার অধিকাংশ বিভিন্ন টেস্ট বা পরীক্ষা সংক্রান্ত। নানা কষ্টে আমার আত্মীয় ওই বিল পরিশোধ করে কলকাতা যায় চিকিৎসার জন্য। ৩৫ টাকা ভিজিটে কলকাতার 'পিয়ারলেস হাসপাতালে'র কিডনি বিশেষজ্ঞ ড. দিপঙ্কর ভট্টাচার্য ঘটনাক্রমে ঢাকার বিভাগীয় প্রধানকে তার বৃটিশ সহপাঠী বলে শনাক্ত করেন এবং আশ্চর্য হন, তিনি বর্ণিত রোগীকে যেসব টেস্ট করিয়েছেন তার ৮০ ভাগ রোগ সম্পর্কিত নয়। ঢাকার ডাক্তার কেবল টেস্টের 'কমিশনের লোভে' ও রোগীর টাকা খসানোর অসৎ মানসে ওই টেস্টগুলো করিয়েছেন। পিয়ারলেসে ৩৫ টাকা ভিজিটে কিডনি বিশেষজ্ঞ ভারতীয় ৭০০ টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে কেবল তার তিনটি টেস্ট করতে বলেন। মোট ৭৩৫ টাকায় তার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ভারতীয় এক হাজার টাকার ওষুধ কিনে বাংলাদেশে ফিরে আসেন আমার সে আত্মীয়। পরে আরো পাঁচ-ছয়বার কলকাতা যেতে হয় তাকে এবং সর্বসাকুল্যে ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যে রোগীর কিডনি চিকিৎসা সম্পন্ন হয় এবং আলস্নাহর রহমতে এখন তিনি কিডনি রোগমুক্ত। উপরের ঘটনাটি আমার নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ। আমি বাংলাদেশের একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক ও দেশকে ভালোবাসি। কখনই চাই না বাংলাদেশের রোগী ভারত বা বিদেশে যাক চিকিৎসা করাতে। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অপশাসনে আমাদের দেশের অনেক মানুষকে তৈরি করেছে 'লোভী-নৈতিকতাহীন একেকটা যন্ত্র-মানুষে'। তাই হাসপাতালের একজন ডাক্তার যেমন নিজের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন, তেমনি হাসপাতালের একজন এমএলএসএসও ধান্ধায় থাকে উপরি কামাইয়ের। একজন সিএনজি ড্রাইভার সন্তুষ্ট নয় তার মিটারে প্রাপ্ত সঠিক হালাল ভাড়ায়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারলে তার মন ভরে না, মাথা ঠিক থাকে না। নৈতিকতাহীন, অসৎ, লোভী মানস লালনকারী বাংলাদেশের একাংশ মানুষ। কিন্তু বিশেষ কোনো মানুষ যতই অসৎ বা নৈতিকতাহীন হোক না কেন তাতে সাধারণের খুব একটা যায়-আসে না; কিন্তু একজন ডাক্তার যদি হয় অসৎ তবে দেশের কী অবস্থা হবে? দেশের মানুষই এখন জানে, বাংলাদেশের দু-একজন হাতে গোনা সৎ ডাক্তার ছাড়া অধিকাংশকে পেয়ে বসেছে নৈতিকতাহীন অসৎ বাণিজ্যিক মানসিকতায়। ডাক্তাররা স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করেন অন্যান্য সরকারি চাকরির মতোই; কিন্তু একজন জজ যদিও আবদার করতে পারেন না যে, তিনি অফিস আওয়ারের পর আবার বিকাল বা রাতে 'প্রাইভেট প্র্যাকটিস' করবেন; কিন্তু ডাক্তাররা তা করেন। যদি জজ বা জেলা প্রশাসক বা পুলিশ সুপার আলাদা 'প্রাইভেট প্র্যাকটিসে' বসেন, তবে চিন্তা করুন, তাদের মূল পেশার কী হবে? এ প্রাইভেট প্র্যাকটিসই একজন ডাক্তারের লোভী তথা নৈতিকতাহীন মানসিকতার মূল কারণ। রোগী ধরার দালাল নেই- এমন ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম। কোনো কোনো ডাক্তারের দালাল তার অফিস আওয়ারের সময় সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফাঁদ পাতে, গ্রামের গরিব রোগীকে ভাগিয়ে নিয়ে যায় তার চেম্বারে। মোবাইলে জানিয়ে দেয় 'বস'কে, ফাঁদে আটকানো রোগীর কথা। সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখার এক ফাঁকে ডাক্তার ঠিকই এসে চেম্বারে দেখে যান তার প্রাইভেট রোগীদের। আবার লিখে দিয়ে যান বিশেষ ক্লিনিকে টেস্ট করানোর কথা। অফিস সময়ে চেয়ার খালি থাকলেও জবাবদিহিতার অভাবে কার জবাব কে নেবে? কারণ যারা ডাক্তারের এ সময়ের হিসাব নেবেন, তাদের তারা ঠিকই সার্ভিস দেন। সরকারি কোনো বড় আমলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলে, তাকে তারা ক্যাবিনে সুন্দরভাবে 'দেখভাল' করেন, যাতে তাদের প্রমোশন কিংবা খাগড়াছড়ি বদলি না হতে হয়। মধ্যবিত্তরা অনেকেই ডাক্তারদের এ চালাকি ধরতে পেরে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক নিদেনপক্ষে ভারত যান। কেবল গ্রামের গরিব মানুষ, যাদের কোথাও যাওয়ার সঙ্গতি নেই, তাদেরই মনের মতো করে ঠকান এ ডাক্তাররা। ডাক্তারদের এ মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার। ডাক্তারদের এ অপকর্ম, দায়িত্বে অবহেলা, লোভ, আয়কর ফাঁকি ইত্যাদি বন্ধে নিম্ন লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। সুরাইয়া ঝুমু শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়