লোহার খনি আবিষ্কার

সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য সুখকর

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের প্রথম লোহার খনির সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার ইসবপুর গ্রামে দীর্ঘ ২ মাস ধরে কূপ খনন করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ১৮ জুন মঙ্গলবার কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনি আবিষ্কারের তথ্য। ইসবপুর গ্রামের ভূগর্ভের ১ হাজার ৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার যে স্তরের সন্ধানের কথা বলেছেন কর্মকর্তারা তা আমাদের দেশের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে, সেসব খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে। আর বাংলাদেশের লোহার মান ৬৫ শতাংশের বেশি। দেশের প্রথম আবিষ্কারও এই লোহার খনি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ খনিজ সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশে কয়লা, তেল ও গ্যাস, চুনাপাথর, ধাতব শিলা ইত্যাদি নানান খনিজ ইতিপূর্বে আবিষ্কৃত হয়েছে। আর এখন লোহার খনি আবিষ্কারের মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হলো আরও নানান খনিজ দ্রব্য মজুদ থাকতে পারে আমাদের দেশে। তবে লোহার খনি আবিষ্কারের ঘটনা যে দেশের অর্থনীতিতে অনবদ্য একটি সংযোজন, তা সংশয়হীনভাবেই বলা যায়। দেশের প্রথম লোহার খনি আবিষ্কার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে খননকাজে নিয়োজিত জিএসবি'র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম জানিয়েছেন এই খনির ব্যাপ্তি রয়েছে ৬-১০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রুমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১ হাজার ১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মিলেছে। এ ছাড়া জানা যায়, ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর ২০১৩ সালে এ গ্রামের ৩ কিলোমিটার পূর্বে মুর্শিদপুর এলাকায় কূপ খনন করে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছিল। সেই গবেষণার সূত্র ধরেই ৬ বছর পর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল থেকে ইসবপুর গ্রামে পুনরায় কূপ খনন শুরু হয় এবং দুই মাসের মধ্যেই কূপের ১৩৮০-১৫০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত খননকালে আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে ৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল। সেই কারণে এখানে জমাট বাধা আদি শিলার ভেতরে লোহার আকরিকের সন্ধান পাওয়া যায়। যেহেতু কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে আবিষ্কৃত লোহার মান ভালো, সেহেতু এটা মনে করা যৌক্তিক যে এই খনি থেকে প্রাপ্ত লোহা যথাযথভাবে উত্তোলন করা হলে তা যেমন আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করবে তেমনইভাবে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে তাদের জীবনমানও উন্নততর হবে। আর এ আশায় বুক বেঁধে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ সরকারের কাছে খনি বাস্তবায়নে জোর দাবি জানিয়েছেন বলেও গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, টেকসই আধুনিক সমাজের জন্য খনিজ পদার্থের উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি অত্যন্ত আবশ্যিক বিষয়। খনিজ পদার্থের উত্তোলন প্রক্রিয়ার প্রকৃতিজনিত কারণেই খনি এলাকার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাঘাত ঘটে থাকে। তাই খনি প্রকৌশলীদের শুধুমাত্র খনিজ পদার্থের উত্তোলন নয় বরং এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি যেন যতটা সম্ভব কম হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। খনি খনন কর্মকান্ডে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নানা বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে খনি নির্মাণে পরিবেশ ও শ্রম নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়গুলো সাধারণভাবে খনি থেকে নিষ্কাশিত পানিতে সৃষ্ট দূষণ, পানি প্রবাহ পথে পলি ও তলানি জমা হওয়া, শব্দদূষণ, ভূমিকম্প, বায়ুদূষণ, আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে বিঘ্ন সৃষ্টি, কৃষি জমির ক্ষতি, ভূমিধস, অগ্নিকান্ড ইত্যাদি আশঙ্কা আছে বলেই বিশ্লেষকরা দাবি করেন। আবার যথাযথ প্রভাব নিরূপণ সমীক্ষা না হওয়ায় বড়পুকুরিয়া ও মধ্যপাড়া খনি এলাকায় উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে খনিজ বর্জ্য উত্তোলিত হয়েছে- যা সন্নিহিত এলাকায় স্তূপাকারে জমা রয়েছে। এ পরিস্থিতি প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে বলেও জানা যায়। ফলে প্রত্যাশা থাকবে, লোহা উত্তোলন প্রক্রিয়ার আগে পরিবেশের স্থিতিশীলতা যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, প্রাকৃতিক সম্পদ একটি দেশের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। সুতরাং এই সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে দেশের সমৃদ্ধির জন্যই। তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে আমরা বর্তমানে অনেক এগিয়ে। সুতরাং নিজেদের সম্পদ নিজেরা যাতে আহরণ করতে পারি সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য।