আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ

বর্তমান আওয়ামী লীগ অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। এখন মানুষের মনে অনেক আশা জন্ম নিচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এখন সবদিক সামাল দিয়ে ঠান্ডা মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। বাংলাদেশের এখন বড় বাধা দুর্নীতি। সব সেক্টরে দুর্নীতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রকাশ | ২১ জুন ২০১৯, ০০:০০

মোনায়েম সরকার
পরাধীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটাতে প্রথম যে দল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায়, তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর ১৯৪৯ সালের গঠন মুহূর্তের আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এক নয়। সময়ের ব্যবধানের সঙ্গে সঙ্গে দলের অনেক কিছুই বদলেছে অথবা বদলাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন তৎকালীন পূর্ববঙ্গে গঠিত হয়, গঠনকালীন মুহূর্তেই তা বৃহৎ দল হিসেবে পরিগণিত হয়। আজকের এই উন্নয়নমুখী বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগ সর্ববৃহৎ দল। এই সর্ববৃহৎ দলের ট্র্যাজেডিও অনেক বড়, অনেক বেশি নির্মম। ইতিহাসের অনেক রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দল গঠনের শুরুর দিকে যারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারাই দেশ স্বাধীনের সময় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তারা প্রায় সবাই নিজের বুকের রক্ত দিয়ে স্বদেশকে স্বাধীন করার খেসারত দিয়ে গেছেন। পৃথিবীর কোনো দেশের একটি রাজনৈতিক দল এত ভাঙাগড়া-দলন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে টিকে আছে কিনা, তা আমার অজানা। আওয়ামী লীগের টিকে থাকার কারণ তার আদর্শবাদ ও সাংগঠনিক শক্তি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আর কোনো দল বাংলাদেশে নেই, যার ভূমিকা আওয়ামী লীগের মতো এত সাহসী ও নির্ভীক। শুধু সাহসিকতা আর নির্ভীকতাই নয়, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষতায়, শোষণহীন সমাজব্যবস্থায়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দলই এই তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য মনে-প্রাণে ধারণ করে না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন তারিখে ঢাকার রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে একাত্তর বছর অতিক্রম করছে এই দল। এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলাম। দলের অনেক নীতি-নির্ধারণেরও গৌরবময় অংশীদার ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রাজনীতির বাইরে থাকলেও এটা ভুলে যাইনি, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের নির্মাতা। আওয়ামী লীগের হাতেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও নির্ভার। বঙ্গবন্ধুর আরেক নাম যদি বাংলাদেশ হয়, তাহলে আওয়ামী লীগেরও আরেক নাম হওয়া উচিত বাংলাদেশের নির্মাতা বা বাংলাদেশের বিনিদ্র রূপকার। আজ বঙ্গবন্ধুর পরে বিশ্বব্যাপী যে নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তার নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা কোনো বাঙালির পক্ষেই শোভন নয়, তবে এ কথা না বললেও নয় যে দেশনায়ক বঙ্গবন্ধু ও দেশনায়ক শেখ হাসিনা দুজনই আজ বিশ্ববরেণ্য। শুধু তাই নয়, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং সামাজিক ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা বঙ্গবন্ধুর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো পার্টির গণভিত্তি নেই। নেই শেকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য বেশির ভাগ পার্টিই জন্ম হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্যে ও অন্ধকারে। তাদের পেছনে ছিল ক্ষমতার লোভ, নয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থতা। যার ফলে দেখা গেছে, সেসব পার্টি কিছুদিন ঢাকঢোল পেটালেও এক সময় ঠিকই নিস্তেজ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ থেকে ছুটে গিয়েও কেউ কেউ নতুন নতুন দল তৈরি করেছেন, নতুন পার্টির নেতা হয়ে পত্রপত্রিকার শিরোনাম হচ্ছেন, কিন্তু আশ্চর্য হলো যেসব নেতা আওয়ামী লীগে থেকে এমপি-মন্ত্রী হতেন, রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্য ছিলেন তারা যখন নিজ নিজ দল গঠন করে নির্বাচন করতে লাগলেন, তখন তারা শুধু হারলেনই না- নির্বাচনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল। আওয়ামী লীগ আমার চোখে বহতা নদীর মতো। এই বিশাল-বিপুল নদী থেকে দুই-এক ফোঁটা জল এদিক-সেদিক চলে গেলে নদীর কোনো পরিবর্তন হয় না, এমনকি নদীর গতিপথও বদলায় না। বরং যে দুই-এক ফোঁটা পানি এদিক-সেদিক হয়, তারাই কিছুদিন পরে শূন্যে মিলিয়ে যায়। উদাহরণ দিলে এমন দৃষ্টান্ত চারপাশে অভাব হবে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে বাংলাদেশে তখন বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে দীর্ঘ ছয় বছরের দুর্বিষহ নির্বাসন জীবন শেষে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের ভার গ্রহণ করেন, সেই সময় রক্তের উত্তরাধিকার আর আদর্শের উত্তরাধিকার নিয়ে দলের মধ্যে ভাঙনের শব্দ শোনা গেলেও শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হয় এবং দীর্ঘ পনের বছর পরে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার একুশ বছর পরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। মাঝখানে ঘটে আরও অনেক ষড়যন্ত্র। সেসব ষড়যন্ত্র ধৈর্যসহকারে প্রতিহত করে বাংলাদেশকে একটি নতুন জায়গায় উপস্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি, অভাব আর দুর্ভিক্ষের দেশ ছিল। এসব কথা এখন রূপকথার মতোই শোনায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও তা পূরণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। আজকের বাংলাদেশ যেখানে আছে সেটা যেমন আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশ বলে বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকৃত হবে- সেই উন্নত বাংলাদেশও গড়ে তুলবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যারা বাংলাদেশের রাজনীতি ও উন্নয়ন কল্পনা করেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নন বলেই আমার মনে হয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশ আজ যেখানে আছে এবং আগামী দিন যেখানে যাবে- তার পুরো পরিকল্পনার রূপকারই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ। সেই হিসেবে বলা যায়, দেশ এখন সর্বক্ষেত্রে যেভাবে সীমাহীন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা অবশ্যই স্বপ্ন জাগানিয়া ব্যাপার। বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে টিকে থাকতে হলে শুধু কৌশল নয়, কর্মক্ষেত্রও প্রসারিত করা দরকার। সেবার মানসিকতা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যাওয়া দরকার। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ও 'কারাগারের রোজনামচা' বই দুটি পাঠ করি, তাহলে দেখবো বঙ্গবন্ধু সেবা দিয়েই মানুষের নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। যেখানে সমস্যা দেখেছেন সেখানেই তিনি সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এর ফলে মানুষের অন্তরে বঙ্গবন্ধুর একটা স্থায়ী আসন রচিত হয়। আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেই এগিয়ে যেতে হবে। দেশ গড়তে হলে, দেশের মানুষকে সোনার বাংলা উপহার দিতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের বিকল্প কিছু নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শুধু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয় বলেই আমি মনে করি। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাঙালির আবেগ ও অনুরাগ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মঞ্চ থেকে শুধু দল গঠনের অনুপ্রেরণা নয়, দেশ গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করা হবে এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে। আজ বঙ্গবন্ধুর নাম আকাশে-বাতাসে সম্মানে উচ্চারিত হচ্ছে, বাংলাদেশ বিশ্বসভায় সুনাম অর্জন করছে, অর্থনীতি ও সামাজিকজীবন কাঙ্ক্ষিত স্তরে উপনীত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ পরিহার করতে হবে। দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং জনমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে। সজাগ থাকতে হবে দলের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে। আওয়ামী লীগের কাছেই বাংলাদেশ আশা করে, কেননা আশার স্বপ্ন আওয়ামী লীগই বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য রাখে। বর্তমান আওয়ামী লীগ অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। এখন মানুষের মনে অনেক আশা জন্ম নিচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এখন সবদিক সামাল দিয়ে ঠান্ডা মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। বাংলাদেশের এখন বড় বাধা দুর্নীতি। সব সেক্টরে দুর্নীতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ অতীতে আওয়ামী লীগের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল, বর্তমানে তাকিয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও তাকিয়ে থাকবে। কেননা আওয়ামী লীগই আমাদের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ। আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। মোনায়েম সরকার: রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট