বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

সুফল পৌঁছে দিতে হবে ঘরে ঘরে

প্রকাশ | ২১ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সম্প্রতি তাদের আউটলুকে জানিয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ২০১৮ অর্থবছরে এ অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা ১৯৭৪ সালের পর সবচেয়ে দ্রম্নত সম্প্রসারণ। এডিবির তথ্য এ সত্যই প্রতিষ্ঠিত করে যে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ৬ শতাংশের বৃত্তে আটকে থাকার পর গত কয়েক অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় আটের ঘরে- আর বাংলাদেশের এ অবস্থান, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এবং মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি খুবই আশাব্যঞ্জক। বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের প্রাথমিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই দেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মাথাপিছু আয় ও মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পরিমাণে অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকার আমলে। এমন অর্জন সরকারের মুকুটে সাফল্যের পালক যোগ করেছে। এর জন্য সরকারের অভিনন্দন প্রাপ্য। বাংলাদেশ পরপর চার বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা সাম্প্রতিক বিশ্বেও বিরল। মূলত, জিডিপির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণেই মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। জনগণের সর্বমোট ব্যক্তিগত আয়কে জনপ্রতি ভাগ দিয়ে মাথাপিছু আয় নির্ধারণ হয়ে থাকে। তবে প্রকট বৈষম্যের এ সমাজে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সুফল সবাই পাচ্ছেন কিনা সেটা বড় প্রশ্ন। বিশ্লেষকদের মতে, জিডিপি বাড়লেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়লেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্ররা দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক বৈষম্যের এই দুষ্টচক্র ভাঙতে না পারলে সংকট আরও তীব্র হতে পারে। একদিকে দারিদ্র্য কমছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ছে। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। বর্তমান সরকার যে দারিদ্র্য বিমোচনে তৎপর সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলোতে উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বাণিজ্য, বৈদেশিক আয় ইত্যাদি খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে আগের তুলনায়। আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করি, এই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি জরুরি হচ্ছে, বৈষম্য কমাতে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। যেহেতু সম্পদের অসম বণ্টন এবং অবৈধ আয়ের উৎসের কারণে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সুতরাং জিডিপির ঊর্ধ্বগতির সুফল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ঘুষ, দুর্নীতি, কর ফাঁকির বিষয়টি কঠোরভাবে প্রতিরোধ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণও আবশ্যক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এডিবির আউটলুকে পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে তা নতুন রেকর্ড হবে উলেস্নখ করে আউটলুকে বলা হয়েছে, 'এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের দ্রম্নত বিকাশের ধারা অব্যাহত থাকবে।' এডিবি মনে করছে, বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে, দক্ষ নেতৃত্ব, সুশাসন, স্থিতিশীল সরকার ও শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বলিষ্ঠ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালা ও সঠিকভাবে উন্নয়ন অগ্রাধিকার দেয়া। এ ছাড়া সরকারের উচ্চ বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি, রপ্তানি বেড়ে যাওয়া, বিদু্যৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়া এবং বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়ে যাওয়াকে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছে এডিবি। আমরাও মনে করি সরকারের নেয়া উদ্যোগ গণমুখী হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। সর্বোপরি বলতে চাই, প্রবৃদ্ধি অর্জনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে কার্যকর উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। যেহেতু সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে কীভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়বে, সে আভাসও দেয়া হয়েছে এডিওতে। ফলে প্রত্যাশা থাকবে এগুলো সরকার আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সম্ভব হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির শতভাগ সুফলও দেশবাসীর ঘরে পৌঁছে যাবে, যা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।