বেড়েই চলেছে নারী নির্যাতন

সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপরাধ বাড়ার মূল কারণ। ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির বিষয় স্পষ্ট দিক হলো- স্থানীয় প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত ব্যর্থতা। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার সাভারে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২ বছরের আরেক শিশু। অন্যদিকে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত ট্রেনের টয়লেটে এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে 'সিল্কসিটি এক্সপ্রেস' ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনের যাত্রীরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে অভিযোগ ওঠা যুবককে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। যুবকের নাম মমিনুল ইসলাম (২৬)। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের মামলায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় লোকলজ্জা ও ক্ষোভে বিষপানে আত্মহত্যা করা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলেজছাত্রী ফারজানা আক্তারের পরিবারকে ধর্ষণকারীরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। এসব কী হচ্ছে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে। চলতি বছরের মে মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। \হঅবাক ব্যাপার যে, যৌন নির্যাতন করছে কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ডাক্তার, কর্মচারী, পুলিশ, আত্মীয়, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই, আমলা, ধনীর দুলাল। কেউ বাদ যাচ্ছে না। ধর্ষিত হচ্ছে ছাত্রী, শিশু, যুবতী, আয়া, বুয়া, গৃহবধূ। রাস্তাঘাটে, রেস্তোরাঁয়, চলন্ত বাসে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গৃহে ঘটছে এই পৈচাশিক ঘটনা। কোথাও আজ নারীরা নিরাপদ নয়। আমাদের নারী, শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না, এমনকি ধর্ষণের পর খুন হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ, অবমাননা এবং এর বিয়োগান্তক পরিণতি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। পৃথিবীব্যাপীই ঘটছে, তবে ইদানীং বাংলাদেশে যেন এর জোয়ার এসেছে। অপরাধীরা তো এ মানব সভ্যতারই অন্তর্গত, আমাদের চারপাশেরই বাসিন্দা। সবাই কোনো না কোনো পরিবারেই বেড়ে উঠেছে। সে পরিবার থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছিল- এটাই আমাদের প্রশ্ন। আমাদের দেশেও নারী নির্যাতন রোধে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন না থাকায় নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। শুধু আইন তৈরি ও পাস নয়- সংশ্লিষ্ট মহলকে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করা উচিত। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে- এ কথা প্রায় সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না, তার কী হবে। সমাজে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারীরা। তাদের নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণ করার পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। পরিবার মামলা করেও এর প্রতিকার পাচ্ছে না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বর্বর হচ্ছে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সমাজ কি এভাবেই চলতে থাকবে, কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে? যে করেই হোক সমাজে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর দায়িত্ব সরকারের। সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন হলে চলবে না। মনে রাখতে হবে নারী স্বাধীনতার পূর্ব শর্ত হচ্ছে সমাজে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে সচেতন ও সোচ্চার হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আসুন আমরা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের মাতা-ভগ্নি-স্ত্রী-কন্যাকে নরপিশাচদের হাত থেকে রক্ষা করি। যৌন নির্যাতন শুধু নারী, শিশুর বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ। মানুষের সম্মিলিত পদক্ষেপ আর সংগ্রামই পারে মানুষকে জাগাতে, নারীকে বাঁচাতে।