ঋণখেলাপি বাড়ছে

কমাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঋণখেলাপিরা জাতীয় অগ্রগতির অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঋণখেলাপির হার কমলেও বাংলাদেশে বেড়ে যাচ্ছে ঋণখেলাপি ও খেলাপি ঋণ। কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমাতে আইন ও বিধি সংস্কার থেকে শুরু করে ঋণখেলাপিদের নানা সুযোগ-সুবিধা জোগানো হচ্ছে। সরকার একে প্রণোদনা বললেও এতে খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়ে চলছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর বেশির ভাগের খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের নিচে। কিন্তু আমাদের দেশে এ হার অনেক বেশি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ৩০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন। এসব ঋণখেলাপির কাছে পাওনা আছে ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, গত ৩৮ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণখেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ জন। এ পরিস্থিতি একটি দেশের জন্য কতটা উদ্বেগের তা সহজেই অনুমেয়। অর্থমন্ত্রী বেশকিছু সদুপদেশ দিয়েছেন খেলাপিদের প্রতি। কিন্তু ব্যাংকের অর্থ মেরে দেয়া যাদের উদ্দেশ্য, এসব সদুপদেশ তারা শুনবেন কিংবা বাড়তি সুবিধা পেয়ে তারা সুপথে আসবেন, অতীত অভিজ্ঞতা তা বলে না। ফলে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েও ফল মেলেনি তা প্রমাণিত। অন্যদিকে ঋণখেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি নৈতিক বিচারেও গ্রহণযোগ্য নয়। ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্তপনা বন্ধ করতে যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আইনে কোনো ফাঁকফোকর থাকলে সেটি বন্ধ করতে হবে। অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা ঠুকে ঋণখেলাপিরা যাতে বছরের পর বছর ঋণ আদায় প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উলস্নসিত করলেও সব উচ্ছ্বাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। তথ্য মতে, অক্টোবর ২০১৫ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯৫৪ জন এবং তাদের কাছে ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর ২০১৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ এবং অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা, রাঘব-বোয়ালদের বাঁচাতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণে আর্থিক খাতের লুটেরারা উৎসাহিত হচ্ছে- বিষয়টি নানান সময়েই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এরপরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ না কমা দুর্ভাগ্যের বলেই মনে করা যেতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক লাভের আশায় বিনিয়োগ করবে, এটিই স্বাভাবিক। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ হচ্ছে ঋণ। কিন্তু সেই ঋণ কোথায় দেয়া হচ্ছে, তা আগে দেখে নেয়াটাও সব ব্যাংকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যে কোনো ঋণ প্রস্তাব আসার পর অনেক ধাপ পেরিয়ে তবেই ঋণ পাস হয়। ঋণ পাস হওয়ার আগে গ্রহীতার ঋণ গ্রহণের যোগ্যতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তার পরও কেন ঋণখেলাপি হচ্ছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হলে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ হবে না। ব্যাংকের টাকা নিলে তা পরিশোধ করতে হয়, এ ধারণা সবার মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে। খেলাপি ঋণ বিস্তারের অন্যতম কারণ অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে সুদের হার কমানো সম্ভব নয়। সুদের হার না কমলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না, যা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটাবে। কাজেই খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এজন্য সবার আগে দরকার ব্যাংকিং খাতকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া। সর্বোপরি বলতে চাই, এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে দ্রম্নত পদক্ষেপ না দিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে সরকারের অঙ্গীকার থাকাও আবশ্যক। সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।