কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্ঘটনা থেমে নেই। একের পর এক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে। সম্প্রতি কুলাউড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল। জানা যায়, সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশন সংলগ্ন বড়ছড়া রেল ব্রিজের ওপর এলে বিকট শব্দে ছিটকে পড়ে ৩টি বগি, এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় নারীসহ ৪ যাত্রী। আহত হয় দুই শতাধিক যাত্রী। এ ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে রোববার রাত পৌনে ১২টায়। বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগ। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার যে, রেলসচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সোমবার সকালে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যত দ্রম্নত সম্ভব সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। . প্রসঙ্গত বলতে চাই, এমন তথ্য উঠে এসেছে যে, রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন বরমচাল স্টেশন অতিক্রমকালে খুব দ্রম্নত গতি ছিল। স্টেশন অতিক্রম করার পরপরই এক বিকট শব্দ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আর্তচিৎকার শুরু হয়। ট্রেন দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কালা মিয়া বাজারের মসজিদের মাইকে ট্রেন দুর্ঘটনার ঘোষণা দেয়া হয় এবং স্থানীয় লোকজনকে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণা শুনেই আশপাশের কয়েক শতাধিক লোকজন ঘুম থেকে জেগে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং উদ্ধার কাজে অংশ নেন। এ ছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশ, থানা পুলিশ, বিজিবি,র্ যাব এবং ফায়ার সার্ভিস রাতে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। আমরা মনে করি, এটা বিবেচনায় নেয়া দরকার যে, স্থানীয়দের মতে, দ্রম্নতগতি আর অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। আর বড়ছড়া নামক পাহাড়ি ছড়ার উপর নির্মিত ৯নং রেল ব্রিজটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমলে নেয়া দরকার, ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনের টিকিটধারী যাত্রীর চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী ছিল দাঁড়ানো। আর যাত্রা শুরুর পর ট্রেনটি খুবই দ্রম্নতগতিতে চলছিল। তখন তাদের মনে হয়েছিল কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দে বগিটি ব্রিজ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। তবে এই ঘটনায় এটি একটি উলেস্নখযোগ্য দিক- ৯৯৯-এ ফোন করার কারণে রক্ষা পেয়েছে বহু প্রাণ। হঠাৎ বিকট শব্দ এবং মানুষের আর্তচিৎকার শুনে তাৎক্ষণিক ন্যাশনাল ইমারজেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন স্থানীয় এক যুবক। মুঠোফোনে ট্রেন দুর্ঘটনার ভয়াবহ খবর দিলে চমকে ওঠে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন পুলিশ সদস্যরা। তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন তারা। আমরা বলতে চাই, এই ঘটনায় যারা আহত হয়েছে তাদের সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া দরকার, স্থানীয় কয়েকজন এমনটিও জানিয়েছেন, লাইনের ত্রম্নটির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর আলোচনায় এসেছে, লাইনের ত্রম্নটির বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তিরা অনেক আগেই স্টেশনে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের জানিয়েছিলেন। ফলে এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, লাইনের ত্রম্নটিসহ যে কোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তা দেখার দায়িত্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। তাই এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখেও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। কেননা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও বেশি সতর্ক হওয়া সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এই রেল দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ শনাক্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, ট্রেন লাইনের কোথাও কোনো সমস্যার কথা স্থানীয় জনসাধারণ জানালে সেটি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়েই রেলের জনবল সংকটের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এর আগেও নানা কারণেই ঘটেছে রেল দুর্ঘটনা। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।