প্রসবে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার

এই প্রবণতা রোধ হোক

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত খবরাখবর বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। যেখানে আলোচনায় এসেছে যে, দেশে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বা সি-সেকশনের (সিজারিয়ান) প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। কোনো কারণ ছাড়াই চিকিৎসক ও প্রসূতির পরিবার এ প্রক্রিয়া বেছে নিচ্ছে! ফলে এই বিষয়গুলো অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়ামন হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি জানা গেল, সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় (সিজারিয়ান) অস্ত্রোপচার বন্ধসহ সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনসহ গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবর যুক্ত করে আবেদনটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। রিট আবেদনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করে প্রসবকালীন অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র মুনাফার জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রসবজনিত অস্ত্রোপচার আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর সাধারণ প্রবণতা। গবেষকরা নিয়মিতভাবে সতর্ক ও অনুরোধ করে যাওয়ার পরও অপ্রয়োজনীয় প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার নিষিদ্ধ করতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না রাষ্ট্র। আমরা মনে করি, যখন অস্ত্রোপচারে ঝুঁকির বিষয়টি স্পষ্ট তখন অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের প্রবণতা বাড়তে থাকলে তা আশঙ্কাজনক। এটা মনে রাখা জরুরি, সেভ দ্য চিলড্রেনের ভাষ্যমতে, সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে রয়েছে নানা রকম ঝুঁকি। মা ও শিশু উভয়কেই এমন অস্ত্রোপচার ঝুঁকিতে ফেলে। এ ছাড়া শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হতে পারে তা আমলে নিতে হবে এবং সিজারিয়ান সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি রেখে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের প্রবণতা রোধ করতে হবে। আমরা মনে করি, অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। গত ২১ জুন সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে গত দুই বছরে শিশু জন্মের ক্ষেত্রে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের হার বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এতে বাবা-মায়েদের সন্তান জন্মদানে যথেষ্ট পরিমাণে ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদনে অপ্রয়োজনীয় প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ঠেকাতে চিকিৎসকদের ওপর নজরদারির যে পরামর্শের বিষয়টিও উঠে এসেছে। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, এর আগে পত্রপত্রিকায় এমন খবরও উঠে এসেছিল যে, সমাজের উচ্চবিত্তের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্রসব হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। অথচ এর অর্ধেকের বেশি অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রসবের ৮০ শতাংশ হয় অস্ত্রোপচারে। আর্থিক কারণে এই হার এত বেশি বলেও জানা গিয়েছিল। এ ছাড়া এমনটিও আলোচনায় এসেছিল যে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের প্রবণতার বৃদ্ধির জন্য শুধু হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকরাই দায়ী নয়। প্রসূতি মায়েরা অনেক সময় ব্যথা সহ্য করতে চান না বলে সিজারে আগ্রহ দেখান। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে ঝুঁকির বিষয়টিকে সামনে রেখে এই প্রবণতা হ্রাস করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। সিজারিয়ানে সন্তান জন্মদানে যেখানে নানা রকম ঝুঁকি বিদ্যমান সেখানে এই প্রবণতা বাড়তে থাকবে এটা হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।