বরগুনায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০১৯, ০০:০০

দায়ীদের কঠোর সাজা নিশ্চিত করুন
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত নামে এক যুবককে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে গত বুধবার। কী নির্মম কী ভয়ঙ্কর এই দৃশ্য! বরগুনার সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স কিন্ডারগার্টেনের সামনের রাস্তায় দুই সন্ত্রাসী যখন রিফাতকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করছে তখন ওই যুবকের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা তাদের নিবৃত করতে প্রাণপণ লড়াই করেও ব্যর্থ হন। পক্ষান্তরে এই দৃশ্য দেখা শত শত মানুষের কেউই এগিয়ে আসেনি যুবককে বাঁচাতে। যুবককে কোপানোর ভিডিওচিত্র তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বরগুনার এ ঘটনাটি ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে নিরীহ যুবক বিশ্বজিৎ দাসকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাকেও যেন হার মানায়। মর্মন্তুদ এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- এ কোন সমাজে বসবাস করছি আমরা? এই দেশে এমন বিভীষিকা আর কত প্রত্যক্ষ করতে হবে দেশবাসীকে? এটা অত্যন্ত উদ্বেগের যে, আমাদের সমাজে অন্যায়-অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় চোখ রাখলেই তা স্পষ্ট হতে পারে। বরগুনার রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মানুষের নৈতিকতা এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর এ পরিস্থিতি একটি দেশের সুস্থ ও স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। সমাজে এমন কোনো অন্যায়-অপরাধ নেই যা ঘটছে না। ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দেশের প্রতিটি স্তর। সুশাসন নিশ্চিত এবং বিচারব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে নানান সংশয় ও প্রশ্ন। সামান্য ঘটনা বা তুচ্ছ কারণে যে সমাজে মানুষ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়, সে সমাজে প্রতিটি নাগরিকই যে নিরাপত্তাহীন তা নতুন করে বলার কিছু নেই। অথচ একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ এবং নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায় রাষ্ট্র কিছুতেই এড়াতে পারে না। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত দুই যুবকের একজন নয়ন বন্ড এবং আরেকজন রিফাত ফরাজী। এরা ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ নানান অপকর্মে জড়িত। তারা একাধিকবার পুলিশের হাতেও গ্রেপ্তার হয়েছে। এদের মধ্যে চন্দনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপরদিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায়, সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্টরা আমলে নিতে পারেন। নিহতের পিতা অভিযোগ করেছেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা। তিনি এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। আমরা মনে করি, এ দাবি শুধু নিহতের পিতার নয়, দেশের সব মানুষের। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, প্রতিটি অপরাধের যথাযথ বিচার নিশ্চিত হোক। অনেক সময় অভিযোগ ওঠে অপরাধীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় আইনের ফাঁক-ফোকর গলে তারা বেরিয়ে যায়। আর বিশ্লেষকরা বলেন, এমনটি ঘটে বলেই অপরাধীরা আবারও নতুন করে অপরাধে উৎসাহিত হয়। বস্তুত অপরাধী অপরাধীই, এদের কোনো দল থাকতে পারে না। আর আমরাও মনে করি, রিফাত হত্যাকান্ডের যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীদের কঠোর সাজা নিশ্চিত করা হবে। উলেস্নখ্য, আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা এবং ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বজিতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় যথাযথ বিচার পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা এমন অভিযোগও আছে। শুধু বিশ্বজিত হত্যাকান্ডই নয়, আরও বহু হত্যাকান্ডের বিচারের ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রতীয়মান হয়। প্রবাদ আছে, 'বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে'; বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার দিকে তাকালে যেন এ সত্যই প্রতিভাত হয়; অথচ এমনটি কারো কাম্য হতে পারে না। রিফাত হত্যাকান্ডের ঘটনায়ও একজন আইনজীবী উলেস্নখ করেছেন, 'এমন অপরাধের ঘটনার বিচার যদি কোনো কারণে বিলম্ব হয় ও বিচারহীন হয়, তা হলে আরো এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।' আমরা জানি, বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। ফলে প্রত্যাশা থাকবে, এমন জঘন্য ও মর্মস্পর্শী ঘটনার দ্রম্নত বিচার হোক। দায়ীদের এমন কঠোর সাজা হোক, যাতে সমাজে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।