এবার দগ্ধ ফুলনের মৃতু্য

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে টানা পাঁচদিন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে অসহ্য যন্ত্রণা সয়ে মৃতু্যর সঙ্গে লড়ে না ফেরার দেশে চলে যান ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। আবার সামনে এলো যেন আরেক নুসরাতের কাহিনী! পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের আগুনে দগ্ধ ফুলন রানী বর্মণকেও বাঁচানো যায়নি, নুসরাত জাহান রাফির মতো তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তার মৃতু্য হয়, সেখানে ১৩ দিন আগে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। তথ্য মতে, গত ১৩ জুন রাতে নরসিংদীর বীরপুর বর্মণপাড়ায় বাড়ির পাশেই ফুলনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, ১৪ জুন নরসিংদী সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন ফুলনের বাবা। তদন্তে নেমে মৃতের পিসতুতো ভাইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফুলনের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আমরা মনে করি, এই ঘটনার ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ফুলনের মৃতু্যর ঘটনায় এমন পরিস্থিতি সামনে আসছে যে, ফুলনের ভাই সুমন বর্মণ বলছেন, যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফুলনের স্বজনের ভাষ্য, মৃতু্যর আগে ফুলন যাদের কথা বলে গেছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের প্রভাবে উল্টো ফুলনের পিসতুতো ভাই ভবতোষসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ফুলনকে হাসপাতালে নেয়ার সময়ও ছিলেন। এ ছাড়া ফুলনের বাবা তার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, অপরাধী যেই হোক না কেন সে যেন শাস্তির মুখোমুখি হয়। এর আগে নুসরাত হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, বিভিন্নভাবেই। এসব চিত্র মানুষের বসবাসের স্বাভাবিকতাকে কতটা হুমকির মুখে ফেলে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন মানুষের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে তারপর সে মৃতু্যর মুখে ঢলে পড়বে এমন বিভীষিকা কোনো সভ্যসমাজে হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা আদিম বর্বরতাকেও যেন হার মানায়। আমরা মনে করি, এমন ঘটনা ঘৃণ্য ও মানবিক অধঃপতনের চিত্রকেই স্পষ্ট করে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, বিভিন্ন সময়েই যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে নানা কারণে অনেকে যেমন আত্মহত্যা করেছেন তেমনি অনেককে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছেই। এবার আবার দুর্বৃত্তের আগুনে দগ্ধ ফুলন রানী বর্মণের মৃতু্যর ঘটনাটি সামনে এলো- যা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যখন আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের সিঁড়িতে চলমান, দেশ নানা দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার বিস্তার ঘটছে- তখন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি আইনের শাসনপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। এবারের ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।