চঁাদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে

সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী, চঁাদাবাজ, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদশের্নর কোনো বিকল্প নেই। চঁাদাবাজদের গ্রেপ্তারের পর প্রায়ই আইনের ফঁাকফোকর দিয়ে সহজেই ছাড়া পায়। তা ছাড়া জেল থেকে বের হয়ে চঁাদাবাজরা আরও সংহারী মূতির্ ধারণ করে।

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮, ২২:৫৬

মীর আব্দুল আলীম
বছরের অন্যান্য সময় চঁাদাবাজি অব্যাহত থাকলেও ঈদ উপলক্ষে চঁাদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। ঈদ সামনে রেখে পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক চঁাদাবাজি হয়েছে। চঁাদা না দিলেই নিযার্তনের শিকার হতে হয়েছে পরিবহন মালিক ও চালকদের। এ সেক্টরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চঁাদা আদায় করা হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, চঁাদাবাজির ঘটনায় অনেক সময় পুলিশ জড়িত থাকায় চঁাদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছে না মানুষ। বকশিশের নামে বিভিন্ন কৌশলে চঁাদা দাবির অভিযোগ উঠেছে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকমীর্ ও পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের বিরুদ্ধে। চঁাদাবাজি ঘটনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে থানায় ডায়েরি ও মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নীরব থাকছেন। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, চঁাদাবাজদের সামাল দিতে গিয়ে তাদের এখন ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা। জানা গেছে, এলাকার বড় বড় সন্ত্রাসীর নাম করে চঁাদা চাওয়া হচ্ছে। অনেক দাগী সন্ত্রাসী এলাকায় না থাকলেও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এলাকার কিছু মাস্তান রাজনৈতিক নেতার পরিচয়েও চঁাদাবাজি করছে। পুলিশের ঊধ্বর্তন কমর্কতাের্দর বক্তব্য হলো, চঁাদাবাজির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। কোথাও চঁাদাবাজির খবর পাওয়া গেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাহলে কেন চঁাদাবাজি বন্ধ হচ্ছে নাÑ এ প্রশ্নের উত্তর কী তারা দেবেন? বস্তুত শুধু শুকনো কথায় চিঁড়া ভিজবে না। চঁাদাবাজ-সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎপাটন করে পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, চঁাদা দাবি করে কেউ ফোন করলেই যেন পুলিশে খবর দেয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদেরও উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা থানা-পুলিশের ওপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না। ঈদকে কেন্দ্র করে চঁাদাবাজিসহ সাংবাৎসরিক চঁাদাবাজি পুরোপুরি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কাযর্কর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাধারণ মানুষের আস্থা অজর্ন করতে হবে। কোন এলাকায় কোন চক্র চঁাদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে, তা পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঈদ ছাড়াও দেশে অবিরাম চঁাদাবাজি চলছে। অনেক সময় উপলক্ষ তৈরি করেও চঁাদা দাবি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় বিদেশে পলাতক কয়েকজন সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করেও চঁাদা চাওয়া হচ্ছে। এসব চঁাদাবাজের হুমকির মুখে অনেক ব্যবসায়ী আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। এ কথা ঠিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষত র‌্যাব সদস্যরা চঁাদাবাজদের মনে কিছুটা হলেও ভয় ঢুকাতে সক্ষম হয়েছে, যে কারণে সরাসরি চঁাদা চাওয়ায় ঘটনা আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। তার বদলে চলছে ফোনে চঁাদাবাজি। একটি সুস্থ সমাজ সবর্দাই আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। চঁাদাবাজি সুস্থ সমাজ কাঠামোয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবর্স্তরে সুশাসন নিশ্চিত হলে চঁাদাবাজি কমে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। জোরপূবর্ক কারও কাছ থেকে চঁাদা আদায় নিঃসন্দেহে অপরাধ। অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দল ও সংস্থার নামেও চঁাদা আদায় করে থাকে। বিশেষ করে পরিবহন খাতে এ ধরনের চঁাদাবাজি বেশি লক্ষ্য করা যায়। চঁাদা আদায় হয় হাট-বাজারে, ফেরিঘাটে, সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালীর নামে। ঈদের সময় বাস ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। এর পেছনে সংশ্লিষ্টদের স্বেচ্ছাচারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি চঁাদাবাজরাও এজন্য দায়ী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক, এ দেশে চঁাদা না দিয়ে কোনো ব্যবসা করা সম্ভব নয়। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী, চঁাদাবাজ, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদশের্নর কোনো বিকল্প নেই। চঁাদাবাজদের গ্রেপ্তারের পর প্রায়ই আইনের ফঁাকফোকর দিয়ে সহজেই ছাড়া পায়। তা ছাড়া জেল থেকে বের হয়ে চঁাদাবাজরা আরও সংহারী মূতির্ ধারণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। চঁাদাবাজদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি বিচারব্যবস্থার সংস্কার নিয়েও ভাবতে হবে। জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিরাজমান আতঙ্ক দূর করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী, চঁাদাবাজ ও ছিনতাইকারীসহ সব অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদশের্নর কোনো বিকল্প নেই। এসব চঁাদাবাজদের কখনো কখনো গ্রেপ্তার করা হলেও আইনের ফঁাকফোকরে তারা সহজেই ছাড়া পায়। জেল থেকে বের হয়ে আরও বিকট চেহারা নিয়ে আবিভার্ব হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। এদের দমনে যেমন সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার, তেমনি বিচারব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়েও ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে জনসাধারণের সহযোগিতা জরুরি। মীর আব্দুল আলীম: সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট হবংিংঃড়ৎব১৩@মসধরষ.পড়স