নতুন অর্থবছর শুরু

খরচের চাপ আমলে নিতে হবে

প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জনসাধারণের জীবনযাপনের মান ও স্বাভাবিকতার প্রশ্নে আর্থিক ব্যয় এবং আর্থিক সঙ্গতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঙ্গত কারণেই এ সংক্রান্ত বিষয় আমলে নেয়া জরুরি। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের বাজেট। এটি গত সোমবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। এবারের বাজেটের পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেছে, গত কয়েক বছর বাস্তবায়ন করতে না পারা ভ্যাট (মূল্যসংযোজন কর) আইন এবারই বাস্তবায়ন হয়েছে। এই ভ্যাট আইনে বেশকিছু নিত্যপণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন বিষয়ও সামনে আসছে যে, এরপরও এই আইন বাস্তবায়নে অনেক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে কিংবা আরোপকৃত ভ্যাটের পরিমাণ বাড়বে। এ ছাড়া বাজেটে বেশকিছু ক্ষেত্রে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এমন পরিস্থিতি আবার এসবের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি। যেটি গত সোমবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। তথ্য মতে, একটি গ্যাসের চুলার জন্য ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যও বেড়েছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেয়া জরুরি যে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা ও সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে সব শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সব নিত্যপণ্যের দাম, বিদু্যৎ, পরিবহন, বাসাভাড়া, কৃষিপণ্য এবং সেবার খরচ বাড়বে। এতে করে সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনযাপনে খরচের বাড়তি চাপ দিয়েই শুরু হলো নতুন অর্থবছর। আমরা মনে করি, মানুষের জীবনযাপনে খরচের বাড়তি চাপের বিষয়টি খতিয়ে দেখে সেই মোতাবেক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, মানুষ যদি আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কিংবা আশঙ্কার মধ্যে নিমজ্জিত হয় সে ক্ষেত্রে বিষয়টি কোনোভাবেই সুখকর হবে না। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে জনসাধারণের চাপের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। জানা গেছে, বাজেটে হোটেলে রাতযাপনে ভাড়ার ওপর উৎসে কর আরোপ করেছে সরকার। এতে হোটেল সেবার ব্যয় আরও কিছুটা বাড়তে পারে। ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কেনাকাটায়ও খরচ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। এ ছাড়া নতুন বাজেটে মুঠোফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিম কার্ডের ওপর কর দ্বিগুণ করে ২০০ টাকা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়ল মুঠোফোন কেনা ও কথা বলার খরচ। এ ছাড়া স্মার্টফোন আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম ব্যাপক বাড়বে এমন বিষয়ই সামনে এসেছে। এ ছাড়া উলেস্নখ্য, এবারের বাজেটে ব্যক্তিগত সব গাড়ি নিবন্ধন, রুট পারমিট, ফিটনেস, মালিকানা সনদ নেয়া ও নবায়নের মাশুলের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে। মোটরসাইকেলের বিদেশি টায়ারে কর বাড়ানো হয়েছে। এতে টায়ারের দাম বাড়বে। তেল-চিনির দামও বাড়বে। চিনি আমদানিতে বাজেটে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলে আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট। আমরা মনে করি, যখন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে তখন তা কীভাবে মানুষ মোকাবেলা করবে সেটি যেমন ভাবতে হবে, তেমনিভাবে জীবনযাপনে যেন হিমশিম খেতে না হয় সেটিও আমলে নিতে হবে। পাস হওয়া বাজেট এবং একইদিন থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যা ছিল, চূড়ান্তভাবেও মোটামুটি তাই রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর করের চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গেল। এ ছাড়া করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি ফলে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন আশঙ্কার বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। আমরা বলতে চাই, বাজেট পাস হওয়ার পর ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় আসছে, ফলে তা আমলে নিতে হবে। জীবনযাত্রার স্বাভাবিকতা বজায় রাখা ও দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।