ওয়াসার পানিতে দূষণ

সুপেয় পানি নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
'পানির অপর নাম জীবন' হলেও বাস্তবতা হলো রাজধানী ঢাকায় ওয়াসা সরবরাহকৃত পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্য মুখে পতিত হচ্ছেন বহু মানুষ। ওয়াসার পানির মান নিয়ে রাজধানীবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ সত্ত্বেও ওয়াসার এমডি বলেছিলেন, ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। ওয়াসার পানি যে সুপেয় নয় তা নানানভাবেই সামনে এসেছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পরীক্ষায়ও মিলেছে মলের অস্তিত্ব। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীবাসী যতগুলো সমস্যা নিয়ে বসবাস করছে, পানি সমস্যা তার অন্যতম। এমনিতেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পানি সংকট রয়েছে। তার ওপর ময়লা ও দূষিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। দূষিত পানি জীবনকে কেমন দুর্বিষহ করে তোলে সেটা সবচেয়ে ভালো বোঝেন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা। ভয়াবহ এ অবস্থার অবসানই কাম্য। গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, হাইকোর্টের দেয়া এক নির্দেশে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধির সমন্বয়ে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের ২১ মে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দেয় আদালত। ঢাকা ওয়াসার পানির উৎস, ১০টি মডস জোনের মধ্যে ৪টি এবং সায়েদাবাদ ও চাঁদনিঘাট এলাকা থেকে সংগৃহীত ৮টি পানির নমুনাতে দূষণ পাওয়া গেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্য। তথ্য অনুযায়ী, এসব এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়া, উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া রয়েছে; এমনকি রাজধানীর এই পরিষেবা সংস্থাটির পানির কিছু কিছু নমুনাতে মলের অস্তিত্বও রয়েছে। আমরা মনে করি, কেবল ৮টি এলাকা নয়। রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকার পানিই দূষিত। ওয়াসার এমডির দাবি ছিল ওয়াসার পানি দূষিত নয়। তার এই দাবি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এক গ্রাহক। তিনি ওয়াসার দূষিত পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন তাকে পান করানোর জন্য। তখন তিনি নিরুপায় হয়ে বলেছিলেন অন্যের বানানো শরবত তিনি পান করেন না। এ ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। প্রকৃত অর্থে ওয়াসার এমডির দাবি যে হাস্যকর ছিল তা সম্প্রতি পানির নমুনা পরীক্ষার মধ্যদিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো। উলেস্নখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দায়েরকৃত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কমিটি গঠন করে এবং পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়। বলাই বাহুল্য, পানি আমাদের জীবন, আবার এই পানি আমাদের জীবননাশের কারণ হতে পারে। ডায়রিয়া এবং অন্যান্য পাকস্থলীর পীড়া, খাদ্যনালির প্রদাহ যেসব পরজীবীর কারণে ঘটে তাদের পানিবাহিত বলে এবং এরা পানির মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়। বাংলাদেশে রোগব্যাধির শতকরা প্রায় পঁচিশ ভাগের কারণ দূষিত পানি বলেও মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্মর্তব্য যে, জনগণের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণে সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ৩৫টি সংস্থার। এরপরও বিশুদ্ধ পানির চাহিদা কেন পূরণ করা যাচ্ছে না- এ প্রশ্ন অযৌক্তিক হতে পারে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর পেছনে অন্যতম কারণ সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা। আর এর সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বিশুদ্ধ পানির নামে জারে করে সাধারণ পানিও তারা বিক্রি করছে চড়া দামে। এমনকি ওয়াসার সাধারণ ও অগভীর নলকূপের পানি বিশুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ প্রবণতাও অত্যন্ত আতঙ্কের। অথচ পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলার অবকাশ নেই। নদীমাতৃক ও প্রবল বৃষ্টির বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দুর্ভাগ্যজনকই বটে। মনে রাখা দরকার, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির লক্ষ্য পূরণে সরকারের অঙ্গীকার রক্ষা করা তখনই সম্ভব, যখন ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি ভেজাল পানি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও নদীদূষণ রোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ সরকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।