প্রাথমিক বিদ্যালয়ের 'মিড ডে মিল'

শিশুরা স্কুলমুখী হোক

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো জরুরি। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার দিকেও ব্যাপক গুরুত্ব দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী যেমন বারবার আলোচনায় এসেছে, তেমনিভাবে অনেক পরিবারই শিশুদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ বোধ করে না, বরং শিশুকালেই তাদের শ্রমনির্ভর কাজে পাঠিয়ে অর্থ আয়ের দিকে ঠেলে দেয় এমনটিও জানা গেছে- যা শিশুর ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলে। সঙ্গত কারণে শিশুদের স্কুলমুখী করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে দুপুরে রান্না করা খাবার পরিবেশনের চিন্তা থাকলেও তা থেকে সরে আসা হচ্ছে। তথ্য মতে, সময়ের অপচয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট হবে- এমন চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়টি সামনে আসছে। জানা যায়, রান্না করা খাবারের পরিবর্তে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডিম-কলা অথবা ডিম-রুটি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। মূলত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরুর চিন্তাভাবনা থাকলেও আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে আগামী অক্টোবর থেকে দেশের ১৬ উপজেলায় 'মিড ডে মিল' হিসেবে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হবে। উলেস্নখ্য, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডবিস্নউএফও) আওতায় ২০১০ সালে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়। সারাদেশের ১০৪টি দরিদ্রপ্রবণ উপজেলার সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং হিসেবে বিস্কুট বিতরণ শুরু হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবানের লামা উপজেলায় ডবিস্নউএফপির আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে 'মিড ডে মিল' বা দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। আমরা মনে করি, সিদ্ধান্ত যেটি গ্রহণ করা হোক না কেন তা যেন শিশুদের স্কুলমুখী করতে সামগ্রিকভাবে তাদের জন্য ইতিবাচক হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে বলতে চাই, যে উদ্যোগই গ্রহণ করা হোক তা থেকে সুফল পেতে হলে সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। উলেস্নখ্য, মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় 'জাতীয় স্কুল মিল' নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করে। ২০১৭ সালে এ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। আর সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় 'জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা-২০১৯' চূড়ান্ত করেছে- যা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। বর্তমানে মন্ত্রণালয় থেকে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি হচ্ছে। এটা তৈরি হলে তা কেবিনেটে (মন্ত্রিসভা) পাঠানো হবে। এরই অংশ হিসেবে পুরোপুরি সরকারিভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১৬ জেলায় আগামী অক্টোবর থেকে চালু হতে পারে 'জাতীয় স্কুল মিল' কার্যক্রম। এরপর দেশের আরও ১০৪টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রান্না করা খাবার তৈরিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, বিদ্যালয়ের পরিবেশেরও ক্ষতি হয়, শিক্ষার্থীদেরও পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে- আর শিশুদের পড়ালেখার ব্যাঘাত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে রান্না করা খাবার দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সংশ্লিষ্টরা সরে আসার চিন্তা করছেন- এমন যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের স্কুলমুখী করাসহ শিশুর সামগ্রিক নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।