চীনের সহযোগিতার আশ্বাস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রম্নত ও নিরাপদ হোক

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খোয়াছিয়াংয়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও বিনিময়পত্র সই হয়েছে। বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। জানা যায়, বৈঠক শেষে চীনের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রসচিব গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'চীন চেষ্টা করবে যাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আলোচনার মধ্যেই একটি সমাধান খুঁজে পায়। চীন মিয়ানমারকে এ ব্যাপারে বোঝাবে, বলছে এবং বলবে।' পাশাপাশি চীনের প্রধানমন্ত্রী 'একটি সমাধানে পৌঁছাতে প্রয়োজনে আমরা আবারও আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমার পাঠাব'- এমন কথাও বলেছেন বলে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, দালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের পর বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা ইসু্যই সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে যে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফরও এ কারণে অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে বলাও বোধ করি অমূলক হতে পারে না। গণমাধ্যমের নানান প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, রাশিয়া এবং ভারত এখন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো কথা বলছে। এমনকি চীনের বক্তব্যও বাংলাদেশের পক্ষে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক চীন সফরেও এর প্রমাণ মিলল। চীন যেহেতু রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারকে বোঝাতে এবং বলতে চেয়েছে, সেহেতু বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ব্যাপারে কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীনের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক সহযোগিতাসহ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ তৈরি হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। এ ছাড়া বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ৯টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও 'লেটার অব এক্সচেঞ্জ' (বিনিময়পত্র) সই হয়েছে। 'লেটার অব এক্সচেঞ্জ'-এর আওতায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন বাংলাদেশে আড়াই হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে। স্মর্তব্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেন, সময় যত গড়াবে চ্যালেঞ্জ ততই বাড়বে। তাই দ্রম্নত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে চীনের ভূমিকা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের এখন 'স্ট্র্যাটেজিক অংশীদারি' আছে এবং এটা আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে বলে চীন আশা করে। পাশাপাশি উভয় দেশই বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, চীনের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়তে চীনের সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় 'ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার' গড়া, 'তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন' প্রকল্প এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উচ্চগতির রেল প্রকল্প দ্রম্নত বাস্তবায়নে চীনের সহযোগিতার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। উলেস্নখ করা যেতে পারে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে শুরু করে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। এরপর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিও হয়। বাস্তবতা যে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফিরিয়ে নেয়নি। মিয়ানমারের প্রতিশ্রম্নতি ভঙ্গের কারণেই প্রশ্ন উঠেছে- মিয়ানমারের খুঁটির জোর কোথায়। অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিধর চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা এবং রোহিঙ্গা ইসু্য নিয়ে প্রথম অবস্থায় চীনের বক্তব্য-বিবৃতি বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের অনুকূলে ছিল না। বিশ্লেষকরা এ বিষয়টিকে মিয়ানমারের নেপথ্য শক্তি হিসেবে মনে করছেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের স্মরণ নেয়ার পরামর্শ আসছিল বিশেষজ্ঞ মহল থেকে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে এ অঞ্চলে। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণে, সংকটের স্থায়ী সমাধানই কাঙ্ক্ষিত। সর্বোপরি মনে করি, দ্বিপক্ষীয় নানান বিষয়সহ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ এবং সংকট মোকাবিলায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রম্নত ও নিরাপদ হোক- এটাই প্রত্যাশা।