রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ

মশা নিধনের উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীতে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, সাধারণত এপ্রিল-জুন মাস থেকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়তে থাকে। আর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। তথ্য মতে, ইতোমধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন, এদের মধ্যে একজন চিকিৎসকও রয়েছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি উলেস্নখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রাজধানীতে ডেঙ্গুর এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এবং বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তাই বলে দিচ্ছে, যে কোনো মুহূর্তে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর রূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। ফলে এই রোগ প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব, তা এখনই ভাবতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশে ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার বিকল্প নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের দুই ভাগ অর্থাৎ ২৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে বসবাস করছে। যার ৭০ ভাগই এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বাস করে। এখনই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বাংলাদেশ এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী হচ্ছে এডিস মশা। এই মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়। সাধারণ মশার চেয়ে এই মশা আকারে বড় এবং ডোরা কাটা। এরা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই কোথাও পানি জমে থাকতে দেয়া উচিত নয়। যেহেতু রোগটি মশাবাহিত তাই মশার বংশ বৃদ্ধি রোধ, নিধন ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সবার আগে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে ঘরের কোণে বারান্দায় যাতে পানি জমে থাকতে না পারে; সেদিকে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। ঘরবাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা বা পানি ধারণ করতে পারে এ জাতীয় এমন পাত্র ফেলে না রাখতে পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। এ ছাড়া ডেঙ্গু মৌসুমে মশারি টানিয়ে ঘুমানো উচিত বলেই তারা মনে করেন। তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগ এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যে জানা যায়, এ বছর কেবল জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭১৩ জন; যা বিগত তিন বছরের শুধু জুন মাসের তুলনায় ৫ গুণেরও বেশি। আর চলতি মাসের প্রথম চারদিনে ৩৫৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই ১৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে এ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহতাকে নির্দেশ করে তা বলাই বাহুল্য। আমরা মনে করি, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অনুধাবন করে এই রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারেই বিবেচনা করা সঙ্গত। উলেস্নখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তেজগাঁও, তুরাগ, পলস্নবী, মগবাজার, উত্তরা, গুলশান, বনানী, কাফরুল, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, পীরেরবাগ, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, বনানী, গুলশান, বারিধারা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, উত্তর ও দক্ষিণ মুগদাপাড়া, বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড, হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, হাজারীবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র বেশি বলে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে রাজধানীবাসীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে হলে মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আগাম সতকর্তা ও জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম ছিল। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সিটি করপোরেশন দুটির কর্তব্য হওয়া দরকার মশা নিধন কার্যক্রম আরও গতিশীল করা। ব্যক্তি সচেতন হলে মশাবাহিত রোগ হ্রাস পেতে পারে, বিশেষজ্ঞদের এমন বিবেচনায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও ব্যাপকহারে বাড়ানো দরকার। মনে রাখা দরকার, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ব্যাপারে হেলাফেলা বা উদাসীনতা প্রত্যাশিত নয়।