করভারে আক্রান্ত মধ্যবিত্ত

এদের কি দেখার কেউ নেই?

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এবারের বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য কোনো সুখবর নেই, শুরু থেকেই এমনটি আলোচনায় এসেছিল। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এবার উচ্চপ্রত্যাশী বাজেটে এমনভাবে কর কাঠামোর জাল বিস্তার করা হয়েছে যে, তাতে জর্জরিত হবেন মধ্যবিত্ত। একজন মধ্যবিত্ত নাগরিক সংসারের দৈনন্দিন খরচ মিটিয়ে কিছু অর্থ সঞ্চয় করবেন, সেখানেও ধার্য করা হয়েছে উৎসে কর। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ এবং ব্যাংকে সঞ্চয়ের মুনাফার বিপরীতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর ধার্য হয়েছে। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জের পাশাপাশি লেনদেনের বিপরীতে গুণতে হবে আবগারি শুল্ক। চেক বইসহ বিভিন্ন ধরনের কার্ড সেবার ওপর রয়েছে চার্জ ও ভ্যাট। জমি বিক্রিতে গেইন ট্যাক্স। শেয়ারবাজারে ৫০ হাজার টাকার বেশি মুনাফা পেলে তার ওপর ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। অথচ একটি দেশের সমাজ বিনির্মাণে মধ্যবিত্ত সমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখে, একই সঙ্গে রাষ্ট্রের আধুনিকায়নে অগ্রভাগেই থাকেন তারা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অর্থ জোগানের বড় অংশই আসে তাদের হাত থেকে। সেই মধ্যবিত্তকেই হরেক রকম বিচিত্র করের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা অত্যন্ত পরিতাপের। অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে, তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে এদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও মানদন্ডের আওতায় আনা হয়। ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৪ কোটির মতো। সব সময়ই এই মধ্যবিত্তদের হরেক রকমের বিচিত্র সব কর দিতে হয়। এর মধ্যে একই কর একাধিকবার দেয়ার নজিরও রয়েছে। এবারও প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাদের ওপর চেপেছে করের বোঝা। এর মধ্যে সরাসরি আছে আয়কর, উৎসে কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, করপোরেট কর, গেইন ট্যাক্স, সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স। আর পরোক্ষভাবে দিতে হয়, আমদানি শুল্ক, আগাম কর, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক। এ ছাড়া নানা সেবা ও পণ্য ক্রয়ে আছে বিচিত্র ধরনের কর। জীবনধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা বইতে বইতে মধ্যবিত্ত সমাজ যে সত্যিই বেকায়দায়, তা বলাই বাহুল্য। মধ্যবিত্তদের সুযোগ দেয়া হলে, এরা দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাস্তবতা হলো, কর ও চার্জের ফাঁদে ফেলে এই শ্রেণিকে দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যেই ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশের বিশেষ একটি শ্রেণিকে কোণঠাসা করে কারা লাভবান হচ্ছে, সেটা প্রশ্ন হতে পারে বৈকি। এ ছাড়া একটি বাজেটের খরচের উৎস কেন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্ররা হবে- এমন প্রশ্নও অযৌক্তিক হতে পারে না। বাজেট মানেই একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে শঙ্কা। আশা আর স্বপ্ন হাত ধরাধরি করে চলে। টাকা আসবে কোথা থেকে আর খরচ হবে কোন খাতে কত- এটা বাজেটের সারকথা হলেও এই হিসাব প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে একটি সরকারের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। সরকারের রূপকল্প এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। বাজেটে প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষায় যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা অনেকের প্রশংসা অর্জন করলেও বস্তুত উচ্চবিত্তদের বেশি ছাড় দেয়া এবং মধ্যবিত্তের ওপর অধিকতর চাপ সৃষ্টি হওয়ায় বাজেটের কড়া সমালোচনাও হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের অনেকেই দাবি করছেন, বাজেটে ধনীদের স্বার্থ বেশি দেখা হয়েছে। সে তুলনায় অনেক বেশি উপেক্ষিত হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এমনিতেই গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এরপরও চলতি অর্থবছরে চিনি, ভোজ্যতেল, এলপি গ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহন, অনলাইনে কেনাকাটার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ফলে এগুলোতেও খরচ বাড়বে। মধ্যবিত্তদের জীবন এমনিতেই নাজুক, এ পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে ভ্যাট ও করের আওতা বাড়ানোয় এ শ্রেণি যে ধীরে ধীরে প্রান্তিক গোষ্ঠীতে পরিণত হবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কে দেবে! একটি দেশের জাতীয় বাজেট সবশ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যেই প্রণীত হওয়া যৌক্তিক। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সুরক্ষায় করমুক্ত আয়সীমা, সঞ্চয়ের উৎসে করসহ এ শ্রেণির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন পদক্ষেপগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ থাকলে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য সেদিকেই নজর দেয়া।