পাঠক মত

বেড়েই চলছে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
লেখাপড়া শুধু আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি নয় চাকরি করতেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। চলমান সময়ে লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটি চকরির কথা ভাবা খুবই কাল্পনিক একটি ব্যাপার। বর্তমানে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে বলে অনেকে মনে করে। পড়া লেখার দিকে তাকালে দেখা যাবে শিক্ষিত বেকার চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি ৩৮তম বিসিএসের যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছে, তাতে অংশ নিয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩২ জন। ৩৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পরীক্ষা দিয়েছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৬ জন। বর্তমানে দেশের সরকারি অফিস, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরসমূহে শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি। একদিকে পদ শূন্য থাকা, অন্যদিকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও চাকরি না পাওয়া খুবই দুঃখজনক। বিশ্বব্যাংক মনে করেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। যে হিসেবে ২ কোটি ২ লাখ লোক বেকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বেকারসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। তাদের মতে, বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২ তম। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের তরুণ বেকারের হার সবচেয়ে বেশি-১০ দশমিক ৪ ভাগ। তাঁদের মধ্যে নারীদের হার বেশি-১৫ শতাংশ। দেশের কর্মক্ষম নারীদের ৬ দশমিক ৮ ভাগ বেকার, পুরুষদের মধ্যে ৩ শতাংশ বেকার। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বেকারদের ৫৬ শতাংশ ছয় মাস থেকে দুই বছরের বেশি সময় পর্যন্ত কাজ পাননি। কমপক্ষে ৬ মাস বেকার ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ লোক। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষিতদের ৪৭ শতাংশ ছয় মাস থেকে দুই বছরের বেশি বেকার থাকে। কমপক্ষে ৬ মাস বেকার থাকে ৪৫ শতাংশ লোক। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষিতদের অর্ধেকই ৬ মাস বেকার থাকে। ৩৫ শতাংশ লোক ৬ মাস থেকে ২ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বেকার থাকে। অন্য এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশের জনশক্তি প্রয়োজনের তুলনায় তেমন দক্ষ না হওয়াতে অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে; যাদের জন্য বছরে ব্যায় হচ্ছে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার। আমাদের বেশের বিবিএসের হিসাবে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৭ লাখ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। পরিবারের মধ্যে কাজ করেন কিন্তু কোন মজুরি পান না, এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ। এ ছাড়া আছে আরও ১ কোটি ৬ লাখ দিনমজুর, যাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে বাহিরে বের হয়ে পাচ্ছে না কোন চাকরি। অন্যদিকে বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শিক্ষিত বেকার সংখ্যা বাড়ার পেছনে তাদের শিক্ষাকে দায়ী করছে, কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলামের ইতিহাসের মতো অনেক বিষয় থেকে অনেকে পাস করে আসছে কিন্তু বাজারে তাদের চাহিদা নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থাও তাতে অনেকটা দায়ী কারণ প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় এসে একেকটি শিক্ষানীতি করে, কিন্তু দেশের ভেতরে বা বাইরে কী ধরনের শিক্ষার কী পরিমাণ চাহিদা আছে, তা নিরূপণ করে শিক্ষাব্যবস্থাটা ঢেলে সাজানোর কাজটি কেউ করেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ খুলছেন, কিন্তু এসব বিভাগের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা পরখ করে দেখছেন না। অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকে দখল করে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানে ওপর পদ। এর মাধ্যমে আটকে যাচ্ছে নিচ থেকে পদোন্নতির পথ। সব মিলিয়ে দেশে চলছে এক ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, যা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারব কি না, তা আমরা নিজেরা স্থির করে কিছুই বলতে পারব না। শামীম শিকদার ভাকোয়াদী, কাপাসিয়া, গাজীপুর