চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বৃষ্টির পানিকে কেন্দ্র করে নগরে দুর্ভোগ কতটা ভয়ানক হতে পারে, সেই বিষয়টি আবারও সামনে এলো। টানা ভারী বৃষ্টিতে সোমবার চট্টগ্রাম নগরীতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে পানি আর পানি, ভাসছে দোকানপাট, ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, হাসাপাতাল, গাড়ি, রিকশা আর মানুষ। পত্রপত্রিকার খবর আমলে নিয়ে বৃষ্টির পানিকে কেন্দ্র করে যে দুর্ভোগের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় তা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলেই আমরা মনে করি। এ ছাড়া এটাও জানা যাচ্ছে, ভারী বৃষ্টিতে সোমবার রাঙামাটির কাপ্তাই এলাকায় পাহাড় ধসে দুজন নিহত হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ায় পানিতে তলিয়ে গিয়ে এবং চকরিয়ায় দেয়াল ধসে আরও দুজন মারা গেছেন। আমরা বলতে চাই, বৃষ্টির পানিকে কেন্দ্র করে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা বিকল্প থাকতে পারে না। আমলে নেয়া দরকার, টানা বৃষ্টিতে সোমবার বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলে দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। বিভিন্ন এলাকা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডুবে থাকে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। নগরী যেন ভাসছিল পানিতে- এমন পরিস্থিতি একটি বাণিজ্যনগরীর জন্য কতটা দুর্বিষহ হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। ঘর থেকে যারা বের হয়েছিলেন, তাদের পথে পথে পোহাতে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ- এমনটিও যখন জানা যাচ্ছে, তখন এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, নাগরিক জীবনের এই দুর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য এবং তা যত দ্রম্নত সম্ভব। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় পাহাড়ধসের সতর্ক বার্তাও জারি করা হয়। আমলে নেয়া দরকার, চট্টগ্রামে নগরে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে এমন বিষয় উঠে এসেছে, খাল দখল, খাল ভরাট, অপরিচ্ছন্ন নালা-নর্দমা, চক্তাই ও মহেশ খালের নদীমুখে রেগুলেটর না থাকা, বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানির যোগসহ নানা কারণে এই জলবাদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং তিন বছরমেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে খাল খনন ও খাল থেকে অবৈধ স্থান উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। আমরা চাই প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক। কেননা এটা মনে রাখা জরুরি, এভাবে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মানুষের জীবন থমকে যাবে, অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই জলাবদ্ধতার কারণগুলো আমলে নিয়ে পরিস্থিতি নিরসনে যত দ্রম্নত সম্ভব সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। লক্ষণীয়, এমন তথ্য সামনে আসছে- এবারের ভারী বৃষ্টিতে নানা রকম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, চাকরিজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। অনেকে বাসাবাড়িতে দিনভর পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। মুরাদপুর ফ্লাইওভারের নিচে জলাবদ্ধতা ছিল সবচেয়ে বেশি। নগরীর ওয়াসার মোড়, বাকলিয়ার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, ষোলশহর ২নং গেট, চান্দগাঁও, মোহরাসহ নগরীর অনেক এলাকা বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, জলাবদ্ধতার কবল থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে না পারলে শুধু জীবনযাপনে দুর্ভোগই নয়, বরং জনজীবনের স্বাভাবিকতাকেই বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা মনে করি, এবারের ভারী বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়নসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। জলাবদ্ধতাকে কেন্দ্র করে এমন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না।