বেকার সমস্যা

পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বেকার সমস্যা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। দিনে দিনে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রবাদে আছে, কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে মোড়া। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কেউ যদি বেকার বা কর্মহীন থাকে তা হলে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। বলা হয়ে থাকে বেকার মানুষ পরিবার সমাজ রাষ্ট্রের বোঝা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ব্যক্তির নিজের কাছেও এখন বোঝা। দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারণে হতাশায় ভোগে তরুণরা আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। অনেকেই আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে যে সামাজিক অবক্ষয় চরমে এর প্রধান কারণ বেকারত্ব। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সুতরাং বেকার লোক সুযোগ পেলে যে কোনো অপরাধ সংঘটিত করতে পারে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৩ লাখ এখন কর্মহীন। বেকারত্ব নিয়ে প্রশ্নে সোমবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর সর্বশেষ জরিপের এ তথ্য জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। পরিসংখ্যান বু্যরোর পরিচালিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারের মধ্যে শিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত ২৩ লাখ ৭৭ হাজার জন এবং নিরক্ষর ৩ লাখ। ২৬ লাখ ৭৭ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ ১৩ লাখ ৪৭ হাজার এবং নারী ১৩ লাখ ৩০৯ হাজার জন। নিরক্ষর ৩ লাখ বেকারের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ২৭ হাজার এবং নারী এক লাখ ৭৩ হাজার। প্রাথমিক পাস বেকারের সংখ্যা ৪ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২ হাজার, নারী ২ লাখ ২৬ হাজার। মাধ্যমিক পাস ৮ লাখ ৯৭ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ২২ হাজার এবং নারী ৪ লাখ ৭৪ হাজার। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেকার ৬ লাখ ৩৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ৫৩ হাজার ও নারী ১ লাখ ৭১ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৪ লাখ ৫ হাজার বেকারের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৪ হাজার ও নারী ১ লাখ ৭১ হাজার। এটা সত্য, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। সে কারণেই প্রচুর লোক প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি জমায়। কাজের সন্ধানে বিদেশে যাওয়া এই শ্রমিকদের অনেকে দক্ষ, অনেকে অদক্ষ। অনেকে আবার তেমন লেখাপড়া জানেন না। প্রতারক চক্র এই অদক্ষতা ও শিক্ষাগত দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এই সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করে বিদেশগামী শ্রমিকদের সঙ্গে। নানা ছুতোয় অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ঘটনা তো অহরহই ঘটে। পাশাপাশি এক কাজের কথা বলে শ্রমিকদের অন্য কাজ দেয়া হয়। যে সুযোগ-সুবিধা ও বেতনের কথা বলা হয় বা চুক্তি হয়, সেখানেও প্রতারণার শিকার হতে হয় শ্রমিকদের। দেশের অর্থনীতিকে সচল ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে যে সব খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এর মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা অন্যতম। কেবল বিদেশে শ্রমবাজার শক্তিশালী করলেই বেকারত্ব দূর হবে না, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আমরা মনে করি বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে শ্রমের বাজারকে আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে কাজের সন্ধানে মানুষ বিদেশে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানেও রয়েছে তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা চাই, সরকার বেকারত্ব নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিক। পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে এবং এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।