মূল্যস্ফীতি কমেছে ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে মূল্যস্ফীতি দুই ধরনের। চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি আর খরচজনিত মূল্যস্ফীতি। যখন কোনো দ্রব্যের চাহিদা জোগানের তুলনায় বেড়ে যায়, তখন দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে। আবার উৎপাদন খরচ কোনো কারণে বেড়ে গিয়ে যদি জোগান ব্যাহত হয় কিন্তু চাহিদা একই থাকে, তখনও মূল্যস্ফীতি হতে পারে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থবছর শুরু হলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ হওয়ার পর মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে তুলে ধরা হয়েছে মূল্যস্ফীতি কমার বিষয়টি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, 'খাদ্য পণ্য বিশেষ করে চাল ও পেঁয়াজের অসাধারণ ফলন হওয়ায় দেশের চাহিদার চেয়ে জোগান বেড়ে গেছে। মূলত এই কারণেই মূল্যস্ফীতি কমেছে।' মূল্যস্ফীতির কারণে যেখানে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে, সেখানে এই হার কমে আসা স্বস্তিদায়ক হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। কৃষি প্রধান এই দেশে খাদ্য পণ্যের প্রচুর জোগান থাকায় দাম কমে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলেও অন্যান্য পণ্য কিংবা সেবার খরচ কমেছে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। যে কারণে ওইসব খাতে মূল্যস্ফীতি কমছে না। এতে ভারসাম্য যে রক্ষা হচ্ছে না, তা পরিষ্কার। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি এ দেশীয় পণ্যের বাজারমূল্যকে নিয়ন্ত্রিত করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ভোক্তারা একদিকে মূল্যস্ফীতি হ্রাস-বৃদ্ধির যাঁতাকলে অবস্থান করছে, অপরদিকে চড়া দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এটাই হচ্ছে বর্তমানের বাস্তবতা। আবার দেখা যায়, শহর ও গ্রামের ক্ষেত্রে এই মূল্যস্ফীতির বেশ প্রভেদ রয়েছে। সঙ্গত কারণেই, মূল্যস্ফীতির ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। আমরা মনে করি, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্যের প্রবাহ এবং দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা, যাতে করে মধ্যস্বত্বভোগীরা চাহিদা-জোগানের সাময়িক ভারসাম্যহীনতার সুযোগ না নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, পণ্যবাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হলেও এখনো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা ছাড়াও প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যপরিধি ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসায় ন্যায্যতা আনায়নের বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা সঙ্গত। মনে রাখতে হবে, মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা মুনাফা করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক, তাই সরকারের নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব হওয়া উচিত সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারে সুষম প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা। উলেস্নখ করা যেতে পারে, মূল্যস্ফীতি অনেক ক্ষেত্রেই অর্থের জোগানের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই সরকারের মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সঠিক সমন্বয় ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বিভিন্ন নীতি ও কর্মপরিকল্পনার সম্পর্ক সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করাও অপরিহার্য। হঠাৎ করে খাদ্যশস্যের ঘাটতি হলে তা মেটানোর জন্য তুলনামূলক কম মূল্যে আমদানির জন্য নতুন নতুন আমদানি বাজারের সঙ্গে আগে থেকেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। লক্ষ্যণীয় যে, খাদ্য পণ্যের দাম মাঝে মধ্যে কমলেও গত এক বছরে খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। যে কারণে এ খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির ভারসাম্য রক্ষায় এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা জরুরি। সর্বোপরি বলতে চাই, সঠিক গবেষণার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য উৎপাদনের সঠিক তথ্য সংগ্রহে রাখতে হবে ও সে অনুযায়ী দ্রম্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা, রাজনৈতিক অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতেই শুধু নয়, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রেক্ষাপটে ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখার গুরুত্ব অপরিসীম এবং এর জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে, দ্রম্নততার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকার সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সতর্ক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলেই মূল্যস্ফীতি কমার সুফল পেতে পারে দেশের সাধারণ মানুষ।