১০ জন নিহত

রেল ক্রসিং সুরক্ষিত হবে কবে?

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিভিন্ন সময়েই রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কিংবা ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ হতাহত হয় এমন খবর সামনে আসে। অথচ যখন একের পর এক এভাবে ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হওয়া দরকার অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের বিষয়টি আমলে নেয়া এবং রেল ক্রসিং বা ট্রেনে কাটা পড়ার ঘটনাগুলোকে সামনে রেখে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ কথা মনে রাখা দরকার যে, শুধু প্রাণহানি নয়, এর বাইরে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণসহ ঘটছে বিভিন্ন ধরনের অনাকঙ্ক্ষিত ঘটনা। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সিরাজগঞ্জের উলস্নাপাড়ায় একটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় বর-কনেসহ ১০ জনের মৃতু্য হয়েছে। আহত হয়েছেন দুজন। তথ্য মতে, সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় উপজেলার সলপ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের শাহিকোলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা বলতে চাই, যখন অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল তখন তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর কত মৃতু্য হলে তারপর লেভেল ক্রসিং সুরক্ষিত হবে? এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সামনে আসে। প্রসঙ্গত বলতে চাই, জানা গেছে, এবারের দুর্ঘটনা তদন্তে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বিভাগ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। সঙ্গত কারণেই, সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা এবং সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগে বিভিন্ন সময়ের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এমন বিষয়ও সামনে এসেছে, দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় না। আমরা চাই, এবারের ঘটনাটি আমলে নিয়ে অরক্ষিত রেল ক্রসিং পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। উলেস্নখ্য, রাজশাহী থেকে আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেস ঢাকা যাচ্ছিল। এ সময় রেল ক্রসিংয়ে উঠেপড়া বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ২০০ গজ ঠেলে নিয়ে যায় ট্রেনটি। পরে মাইক্রোবাসটি লাইন থেকে সরানোর পর ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমনটি জানা গেছে। উলস্নাপাড়া থানার ওসি জানিয়েছেন, উলস্নাপাড়ার গুচ্ছগ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে বরযাত্রীদের নিয়ে মাইক্রোবাসটি সদরের উত্তরকান্দাপাড়া গ্রামে ফিরছিল। আর এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত হন। দুজনের মৃতু্য হয় হাসপাতালে। আমরা বলতে চাই, অরক্ষিত রেল ক্রসিং যে মৃতু্যফাঁদে পরিণত হতে পারে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও তা সামনে এলো। বিভিন্ন সময়েই এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে, রেল ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ক্রস করে চলে গেছে সড়ক পথ। আর সেই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষের শিকার হয়। কেননা ট্রেন যখন আসবে তখন সড়ক পথের যান চলাচল বন্ধ থাকবে এটাই নিয়ম, আর এই দায়িত্বটা হচ্ছে, নিয়োজিত গেটম্যানের। কিন্তু অনেক ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই এমন বিষয়ও সামনে এসেছে বারবার। আমরা মনে করি যত দ্রম্নত সম্ভব সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা অরক্ষিত রেল ক্রসিংকে কেন্দ্র করে একের পর এক মানুষ চলে যাবে না ফেরার দেশে, এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সর্বোপরি বলতে চাই, অরক্ষিত রেল ক্রসিং ছাড়াও রেললাইনকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার বিষয় জানা যায়। যাত্রীদের ওপর ঢিল ছোড়া, ছিনতাই ও চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটাচলাসহ অসচেতনতার কারণেও ঘটে দুর্ঘটনা। ফলে নিয়ম-কানুন ও আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে রেল ক্রসিং সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, দুর্ঘটনা এড়াতে যেমন রেল ক্রসিংকে সুরক্ষিত করতে হবে, তেমনিভাবে জনসচেতনতা বাড়াতেও উদ্যোগী হতে হবে। দুর্ঘটনার সামগ্রিক চিত্র আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।